সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

হরিপুরে আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

মোঃ ইউসুফ আলী
  • আপডেট : রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে পাঁচ কেজি রসুনে এক মন আমন ধান পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে অত্র উপজেলায় আমন ধান কাঁটামাড়া পুরোদমে চলছে এ সময় কিষান-কিষানীরা ধান সংগ্রহ ও সংরক্ষনে ব্যাস্ত সময় পার করছে।

ধান বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি নেই, সকলের মনে বড়ই আক্ষেপ। উপজেলার একমাত্র বড় হাট যাদুরানী বাজার। গত মংঙ্গলবার হাটে প্রথমে প্রতিমন ১০৫০/= টাকা দরে ধান বিক্রি হলেও কিছুক্ষন পরে দাম কমতে কমতে প্রতি মন আমন ধান ৯৫০/= শত টাকা দরে বিক্রি হতে থাকে। জনৈক ধান চাষী এক জন অপর জনের সাথে কথোপথন করছিল যে, কাটা মাড়াই করার সময় ধানের দাম কমে গেলে আমরা মধ্যবিত্ত কৃষক বেচে থাকবো কি ভাবে?

লহুচাঁদ গ্রামের কৃষক মোঃ আমিরুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানালেন যে, আমি দুইবিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। খুব ভালো ফলন হলে ৪০ মন ধান পাওয়া যাবে। শ্রমিকের ধানকাটা ও মাড়াই এর মুজুরী বাবত ধান দিতে হবে ৮ মন। তাছাড়া ক্ষেতের পাকাধান মাঠ হতে আনয়ন মাড়াই মেশিন বাবদ পৃথক টাকা দিতে হয়। আবার, ধানের যাকাত অসুর বাবদ দুইমন ধান দিতে হবে। সব মিলিয়ে যে পরিমান ধান থাকবে তা দিয়ে ঐ জমিতে ভুট্টা আবাদ করা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। ঐ জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে হলে খরচের তালিকায় জমি চাষ, জৈব সার প্রয়োগ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশক, ভুট্টা বীজ ক্রয় বাবদ, জমি সেচ বাবদ সহ ভুট্টা লাগানোর প্রয়োজনীয় শ্রমিক এর মুজরী- সব মিলিয়ে যা খরচ আসবে তা ঐ আমন ধান বিক্রয় করে কুলিয়ে উঠা সম্ভব হবেনা। তাছাড়া মুদির দোকানের দেনা, ঔষধের দোকানের পাওনা, কাপড়ের দোকানের ধার, সার ও বিষের বকেয়া ধার শোধ করতে হবে মর্মে বর্তমানে হালখাতার দাওয়াত পত্র দিতে শুরু করেছে। এদিকে ব্যাংকের ঋনের টাকা পরিশোধের জন্য তগাদা এসেছে আবার একাধিক বার লাল নোটিশ দেওয়ার কথা ও ব্যংক থেকে বলা হচ্ছে। আমারতো বিক্রি করারমত আর কোন উপায় দেখছিনা।

অপর এক জন ধান চাষী সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ জোহাক আলী জানালেন যে, আমন ধান আবাদ করতে যে পরিমান রাসায়নিক সার, বীজ, কিটনাশক, ট্রাকটর ভাড়া, শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে উৎপন্ন ধান বিক্রয় করে তা থেকে উৎপাদন খরচ উঠে আসছেনা। চলতি মওসুমে আবার ভুট্টা, গম, সরিষা, আবাদ করতে গিয়ে যে ভাবে ঋনের খাতা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, উৎপন্ন ফসলের দাম ধানের মত কমে গেলে তা থেকে উৎপাদন খরচ ও উঠে আসবে না।

অপর চাষি জানালেন যে, হাড়ভাংগা পরিশ্রম করেও সপ্তাহে একদিন মাছ / গোস্ত ক্রয় করার সামর্থ থাকেনা। জনৈক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন য়ে, বাজারে যাওয়ার সময় আমার সহর্ধমিনি বল্লেন, বড় মেয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে এসেছে একটু ভলো তরিতরকারী আনবেন। ধান বিক্রির টাকা পাওনাদারকে দিতে দিতে শুন্য হাতে বাড়ি ফিরলাম। বাকিতে দোকানে দায়দেনা করতে সাহস পেলামনা। একটু রাত করে খালি বেগ হাতে বাড়ি ফিরে আসাতে ব্যাগ খালী দেখে আমার সহধমিনি রাগ হয়ে বকা দিতে শুরু করলেন। সেইসময় আমার নিরবে চোখ মুছা ছাড়া আর কোন উপাই ছিলনা।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে প্রতিনিধিকে জানান যে, এবছর আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৬০৬৪ হেঃ, জমি। আমন ধান আবাদ হয়েছে ১৬১৩৫ হেঃ। বর্তমানে অত্র উপজেলায় আবাদিভুমির পরিমান ১৮০০০ হাজার হেঃ, মোট ভূমির পরিমান ২০১১৫ হেঃ।

অপর দিকে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদক কে অবহিত করেন যে, চলতি মৌসুমে ধান ৬৫ মেঃটন, চাল ৬০২ মেঃটন সংগ্রহ করা হবে। বর্তমানে অত্র গোডাউনে ধান প্রতি কেজি ৩০টাকা, চাল প্রতি কেজি ৪৪ টাকা দরে ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখ থেকে ক্রয় শুরু হয়েছে শেষ হবে ২৮ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ইং তারিখে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS