শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
সরাসরি সমুদ্রপথে শিপিং সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মনোস্পুল বাংলাদেশ সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে সকল শাখায় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং ইসলামি শিক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা রাখার দাবি ৮ বছরের সাফল্যে ভিভো, পুরস্কারে ভরা উদযাপন! আইসিএবির ঢাকা রিজিওনাল কমিটির উদ্যোগে হাতিরঝিলে অনুষ্ঠিত হলো অ্যাকাউন্টিং ডে রান ২০২৫: সুস্বাস্থ্য, সংহতি ও পেশাগত জীবনের এক অনন্য উৎসব চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাসোসিয়েশনের চূড়ান্ত কমিটি গঠন: সভাপতি মোঃ তবারক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা হাকিবুর রহমান লিটন জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে তওহীদভিত্তিক শিক্ষানীতির বিকল্প নাই ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও যুব সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ জিয়ার মাজারে নাগরিক দলের শ্রদ্ধা এবং বিএনপির র‌্যালি অনুষ্ঠিত ভৈরবে ট্রাকের পিছনে পিকআপের ধাক্কায় চালক ও হেলপার গুরুতর আহত

আমার বাবা আমার শক্তি ও প্রেরণা: গনি মিয়া বাবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আমার বাবা মোঃ ইসমাইল হোসেন। তিনি শুধু আমার জন্মদাতা নন, আমার আদর্শেরও প্রতীক। তিনি আমার শক্তি ও প্রেরণা। ১২ আগস্ট ২০২৩ শনিবার তাঁর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ইসমাইল হোসেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তাঁর জন্মস্থান গাজীপুর  জেলার শ্রীপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৮টায় শ্রীপুর টেপিরবাড়ী গ্রামস্থ মরহুমের কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল, সকাল ১০টা থেকে কোরআনখানি, বাদ জুম্মা মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে দুপুরে খাবারের আয়োজন।

বিকাল ৪টায় টেপিরবাড়ীস্থ কাছম আলী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণে মরহুমের স্মরণে আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। উল্লেখ্য মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকেও অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনার জন্যে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে দোয়া চেয়েছেন তাঁর পরিবার।

১২ আগস্ট ২০১৪ আমার বাবা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে আমার দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত কাছম আলী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল মাঠে ঐদিন বিকালে তাঁর নামাজে জানাযা শেষে টেপিরবাড়ি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। তখন আকাশ থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নামছিল। মনে হয় বাবার শোকে বুঝি আকাশও কাঁদছিল।

জানাযায় শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল জলিল বি.এ, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. শামসুল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল, শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শ্রীপুর উপজেলা শাখার সহ সভাপতি মোঃ মোসলেহ উদ্দিন মাষ্টার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আশ্রাফ আলী বেপারী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল, শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, শ্রীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলামসহ প্রায় ৫ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লী উপস্থিত ছিলেন।

১৬ আগস্ট ২০১৪ তারিখে কাছম আলী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল মাঠে তার কুলখানি অনুষ্ঠানেও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আমার বাবা ছিলেন নির্লোভ, নির্মোহ, নিরংহকার ও পরোপকারী। জীবনভর দিয়েছেন সবসময় উজাড় করে, নেননি কিছুই। হৃদয় দিয়েই ভালবাসতেন সুহৃদসহ ছোট-বড় সকলকেই। যে ভালবাসা ছিল নিখাদ, নির্ভেজাল, তার মধ্যে কোনদিন রাগ, ক্ষোভ, জেদ, বিরক্তি, অসহিষ্ণুতা, মুখভার- এগুলোর একটিও ছিল না। তার কথায় কেউ আহত হয়েছেন এমন নজির মেলা ভার। যেকোন কাজে তাঁর কাছে সহযোগিতা চেয়ে পাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাবা হলেন আমার আদর্শ মানুষ। আমার কাছে আমার বাবা ভাল বুজুর্গ মানুষ বা তিনি ভাল পীর ছিলেন। তিনি আমার শক্তিরও উৎস। আমি আমার বাবাকে কাছ থেকে দেখেছি, নিকট থেকে জেনেছি। বাবার মুখে কখনো খারাপ কথা শুনিনি, বাবা কখনো কাউকে গালি দিতেন না। সিগারেট খেতেন না, দোকানে গিয়ে কখনও আড্ডা দিতেন না। বাবার কোন খারাপ বন্ধু ছিল না। বাবা কখনও খারাপ মানুষের সাথে ওঠাবসা করেননি। বাবা কারো সাথে কোনদিন খারাপ ব্যবহার করতেন না। আমার দৃষ্টিতে আমার বাবা হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। তিনি ছিলেন ভাল অভিভাবক।

আমার বাবা তার ভাইদের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। তারা বাবাকে সম্মান করতেন, চাচারা আমার বাবাকে দাদা বলে সম্বোধন করতেন। বাবা মেট্টিক পাশ করার পর কিছুদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তারপর তিনি সফলতা ও প্রশংসার সাথে ব্যবসা করেছেন। জীবনের শেষ অংশে তিনি নিজস্ব জোত-জমিতে কৃষিকাজ দেখাশুনা করতেন এবং আমাদের জমিতে যেসকল কৃষি শ্রমিক কাজ করতো তাদের কাছেও তিনি খুবই প্রিয় মানুষ ছিলেন। আমাদের বাড়িতে বার্ষিক হিসেবে নিয়মিত ৫/৬ জন লোক কাজ করতো তাদের পরিচালনা ও দেখাশোনাও তিনি করতেন। আমাদের গ্রামে সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যমান। সমাজের প্রধান হিসেবেও মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আমার বাবা দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের বাড়ির সামনে জামে মসজিদ, ফোরকানিয়া মাদরাসা, স্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানের জন্য তিনি জমি দান করে গেছেন। তিনি একজন সমাজ সচেতন মানুষ ছিলেন। এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তিনি টেপিরবাড়ি কৃষক সমবায় সমিতি গড়ে তুলেছিলেন। এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসেবে তিনি এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করেছিলেন। এই সমিতির মাধ্যমে এলাকার কৃষকগণ সহজশর্তে টাকা পেত এবং কিস্তির মাধ্যমে কৃষক তার দেনা পরিশোধ করতো।

আমার বাবার নেতৃত্বে এই কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে সঞ্চয় সংগ্রহ করে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন মোতাবেক কৃষকদের মধ্যে কৃষি সামগ্রী বিতরণ করা হতো। এতে অনেক দরিদ্র কৃষকও স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি নিজের ও এলাকার মানুষের জমিতে সেচের জন্য ১৯৮০ সালে নিজস্ব জমিতে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছিলেন। এই গভীর নলকূপ স্থাপনে ঐ সময় খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ টাকা। যার সিংহভাগ তিনি নিজেই প্রদান করেছেন। তিনি  একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ছিলেন। বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে তিনি ১৯৭৮ সালে আমাদের বাড়ীতে  টিউবওয়েল স্থাপন করেছিলেন, এতে নিজের পরিবারের সদস্য ছাড়াও গ্রামের লোকজনদের পানীয়জলের সুব্যবস্থা হয়। তিনি সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসতেন। তিনি একজন বৃক্ষ প্রেমিক মানুষ ছিলেন, প্রতি বছর বর্ষাকালে তিনি ফলজ, বনজ ও ভেষজ বৃক্ষের চারা রোপণ করতেন। রোপিত বৃক্ষের সংরক্ষণ  ও পরিচর্যার বিষয়েও তিনি সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে তিনি আমাদের  বাড়ীর চারপাশকে সবুজে শ্যামলে মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে গেছেন। এলাকার অনেক দরিদ্র মানুষের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খচর তিনি গোপনে বা প্রকাশ্যে দিয়েছেন। ধর্মীয় শিক্ষা অর্থাৎ মাদ্রাসা ছাত্রদেরও তিনি আর্থিকভাবে সহায়তা করতেন। এলাকার অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য তিনি সর্বদা কাজ করে গেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন প্রচার বিমুখ। তিনি দান করতে কৃপণ ছিলেন না। কিন্তু নিজ নাম প্রচারে তিনি বড়ই কৃপণ ছিলেন। আমার বাবা একজন ধৈর্য্যশীল মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো হা-হুতাশ করতেন না। তিনি একমাত্র আল্লাহর সাহায্য চাইতেন। তিনি খুবই খোদাভীরু ও পরহেযগার মানুষ ছিলেন। তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে পড়তেন। ৯২ বছর বয়সেও তাঁর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক ছিল। তিনি ধর্মীয় বইপত্র স্বাভাবিকভাবে পড়তেন। মসজিদে তালিমে তিনি কিতাব পড়তেন। দীর্ঘদনি তিনি আমাদের বাড়ির মসজিদে আযান দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি মোয়াজ্জিনের কাজও করেছেন। আমি দেখেছি আমার বাবা সর্বদা আল্লাহ তায়ালার জিকির করতেন। অসুস্থ্য অবস্থাতেও তিনি তাইয়্যুম করে নামাজ পড়েছেন এবং সারাক্ষণ আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল ছিলেন। আমাদের কাছে তাঁর একমাত্র চাওয়া ছিল আমরা যেন মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন ভাল মানুষ হই। আমার বাবা আর কখনো ফিরে আসবেন না। আসা সম্ভবও নয়। কিন্তু আমার বাবার একমাত্র চাওয়া আমরা যেন ভাল মানুষ হতে পারি। সকলের কাছে দোয়া চাই আমরা যেন ভাল মানুষ হিসেবে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে পারি। অসহায় মানুষের সহায়তায় যেন আমরা কাজ করে যেতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমার বাবাকে যেন ফেরদৌস বেহেশত দান করেন, আমীন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS