শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

মোবাইলে সেবাদানকারী এমএফএস’র ১০ বছর পূর্তি উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২
  • ৩৩৮ Time View

মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেন আরো সহজ, নিরাপদ, তাৎক্ষণিক করা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরো সম্প্রসারিত করার প্রত্যয় নিয়ে ঢাকায় শেষ হলো মুঠোফোনে সেবাদানকারী এমএফএসএর ১০ বছর পূর্তি উদযাপন উৎসব। ‘হাতের মুঠোয় আর্থিক সেবা’ এই স্লোগানে ১১ কোটি মানুষের বেশি গ্রাহকের এমএফএস খাতের ১০ বছর পূর্তি উদযাপিত হচ্ছে ।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিশেষ অতিথি হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং গেস্ট অফ অনার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন।

এমএফএস এর দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেয়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বাণী অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় তাঁদের শুভেচ্ছা জানান।

ডাচ্বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মো. শিরিন, বিকাশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কামাল কাদীর এক দশকে কোটি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে ওঠা এমএফএস সেবার যাত্রা পথের চিত্র এবং ভবিষ্যতের এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়, ট্যাপ, মাই ক্যাশ, টেলিক্যাশ, ট্যাপ এন পে, এফএসআইবিএল, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, ওকে ওয়ালেট, ইসলামিক ওয়ালেট ও নগদ এর পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে মেলা, আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ১০ বছর পূর্তি উদযাপিত হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এমএফএসের কল্যাণে এখন আমরা যেখানেই থাকি, যখন দরকার তখনই কয়েকটা বাটন চেপে ডিজিটাল মানি পৌঁছে দিতে পারি প্রিয়জনের কিংবা যার প্রয়োজন সেই মানুষটির কাছে। কেনাকাটা, বিল পেমেন্ট থেকে শুরু করে প্রায় সব সেবাই এখন এসে গেছে গ্রামের কিংবা শহরের, শিক্ষিত কিংবা শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত, ধনী কিংবা দরিদ্র- সকল সাধারণ মানুষের আঙ্গুলের ডগায়। এটিই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গত দশ বছরের অর্জন।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে মোবাইল ফোন ও অ্যাপ নির্ভর ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য সেবা মানুষ এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিতে পারছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ধরনের ভাতা এখন এমএফএসের কল্যাণে সরাসরি উপকারভোগীদের মোবাইল ফোনে পৌঁছে যাচ্ছে। এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো সহজ, সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থিক লেনদেন নিশ্চিতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান আরো উন্নত করবে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে – এটিই আমার প্রত্যাশা।’

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘আমি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই যারা শুধুমাত্র নানান রকমের গ্রাহক-বান্ধব সেবা চালু করেনি বরং মানুষের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের জ্ঞান বা ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমএফএস খাত সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও স্টেকহোল্ডারদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এতোখানি এগিয়ে গেছে।’

সমাপনী অনুষ্ঠানের দুই পর্বের আয়োজনে প্রথম পর্বে কেন্দ্রিয় ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ, গবেষক সহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। এই পর্বে এমএফএস নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থার পরিপ্রেক্ষণ থেকে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এর মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক এবং এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিপ্রেক্ষণ থেকে আলোচনা করেন ইসলামী ব্যাংক এর এমডি ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিভিন্ন আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘এমএফএস মেলা’ ৩ মার্চ শুরু হয়ে । সর্বশেষ ১০ মার্চ ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। সচেতনতামূলক পুতুল নাচ, গম্ভীরা, মঞ্চ নাটকের জমজমাট আয়োজনে কেন্দ্রিয় ব্যাংক, এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক, এজেন্ট, মার্চেন্ট সহ সাধারণ মানুষেরও উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

এক দশক আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও ঐকান্তিক ইচ্ছায় প্রশস্ত হয় বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবার পথ চলা। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের অংশ হিসেবে ব্যাংকিং সেবার বাইরে বা সীমিত ব্যাংকিং সেবার আওতায় থাকা জনগনকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে ২০১১ সালে শুরু হয় মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে মাত্র দশ বছরেই এমএফএস এখন দেশের মানুষের প্রতিদিনের আর্থিক লেনদেনের অংশ।

ব্যাংক-লেড মডেলে যাত্রা শুরু করা এ খাতে বর্তমানে ১৩টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান সেবা দিচ্ছে। সবগুলো এমএফএস মিলিয়ে গ্রাহক সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। এজেন্ট সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। গড়ে দৈনিক দুই কোটি বারের ওপরে লেনদেন হয় এমএফএসে, টাকার অংকে যার পরিমাণ ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর জন্য ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউটের সুযোগ নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল সেবা যুক্ত করেছে এমএফএস। মোবাইল রিচার্জ করা, বিদেশ থেকে সরাসরি রেমিটেন্স পাওয়া, মোবাইল অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত অর্থের উপর মুনাফা, বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি সেবার বিল পেমেন্ট, ব্যাংক থেকে এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা আনা, এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো, সরকারের বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণ, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকদের বেতন বিতরণ, এমএফএস অ্যাকাউন্টে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ন্যানো ঋণ এবং মাসিক সঞ্চয় সেবাসহ প্রতিনিয়তই নতুন সেবায় সমৃদ্ধ হচ্ছে এমএফএস খাত। ফলে সক্ষমতা ও স্বাধীনতা এসেছে মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS