নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ক্যারিয়ার সবারই থাকে, কারো উজ্জ্বল আর কারো অন্ধকার। বর্তমানে বেশির ভাগ তরুণ শিক্ষার্থী ক্যারিয়ার মানে সরকারি চাকরি, বিসিএস ক্যাডার হওয়া অথবা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়াকে ধারণ করে। আসলেই কি তাই? একজন শিক্ষার্থীর অবশ্যই ক্যারিয়ার ভাবনা থাকা উচিত। নিজেকে জানার প্রবল ইচ্ছে থাকা দরকার।
বর্তমানে বেশির ভাগ তরুণ ক্যারিয়ার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। কারণ তারা ক্যারিয়ার পছন্দ করতে ব্যর্থ হয়। কারণ তারা জানে না ক্যারিয়ার পছন্দ কখন কীভাবে করতে হয়।
একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি দক্ষতার প্রতি খেয়াল করুতে হবে। নেটওয়ার্কিং বা যোগাযোগের দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, বিশেষ করে মোটামুটিভাবে ইংরেজীতে কথাবলার দক্ষতাসহ সাংগঠনিক দক্ষতা।
যে বিষয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক সে বিষয়ে দক্ষতা।
দেশ প্রযুক্তি নির্ভর হতে যাচ্ছে। তাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ভাবনার সঙ্গী সরকারি আজিজুল হক কলেজের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ক্যারিয়ার ক্লাব। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই ক্লাবের কার্যক্রম ক্যারিয়ার উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলছে সমান তালে। সদস্যদের মধ্যে মেহেরাব মুন, মো. সাখাওয়াত , মো. মুজতাহিদ, রাকিবুল হাসান ও কে এম জিয়াদের ক্যারিয়ার ভাবনা তুলে ধরেছেন ক্লাবের আরেক সদস্য মো. নাজমুল হোসেন।
প্রতিনিয়ত নিজের মতো করে একটি জগৎ নিয়ে কল্পনা করি আমরা। যেখানে বেশিরভাগ ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল আর সফলতার হাতছানি পাই। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের ক্যারিয়ার নিজেই গড়ে।
স্বপ্ন সবারই থাকে। ভবিষ্যতে ভালো কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করার প্রয়াস স্বপ্নকে আরো তাড়না দিচ্ছে। ছাত্রজীবন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করার কোন বিকল্প নেই বলে আমরা শুনে থাকি। কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি কি কি করতে হবে তা নিয়ে যেমন দ্বিধায় থাকি তেমনই ক্যারিয়ার কোন পথে গড়বো তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে শিক্ষা জীবনের হিংসভাগ সময় পার করে ফেলি। তবে ক্যারিয়ার ক্লাবের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা আর উপযুক্ত সময়ে যুগোপযোগী তথ্য আর সেমিনারে খানিকটা গতি পায় শিক্ষা জীবন। অদম্য আগ্রহের জায়গা তৈরি হয় ক্যারিয়ার নিয়ে।
সিভি প্রস্তুত, ডিবেটিং, পাবলিক স্পিকিং, প্রেজেন্টেশন ও ইংরেজিতে দক্ষতা নিয়ে যে ভীতি দেখা যায় আমাদের মধ্যে। তা দূর করার জন্য ক্যারিয়ার ক্লাব বন্ধুর মতো কাজ করে থাকে। সরকারি আজিজুল হক কলেজ ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাব সে সুযোগ করে দিয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদ হতে যেমন জুরি নাই। তেমনি ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে এ সংগঠন আমাকে তথ্য ও উৎসাহ দিয়ে আত্মতৃপ্তির জায়গায় সারথি হয়েছে।
মো. মেহরাব হোসেন মুন
সদস্য, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাব
স্নাতক তৃতীয় বর্ষ,
সরকারি আজিজুল হক কলেজ,বগুড়া।
প্রতিটি মানুষের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে যা মানুষকে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়। মোটাদাগে, ক্যারিয়ারের সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অধ্যাবসায় কিংবা ধৈর্যের প্রয়োজন যা সবার মাঝে কমবেশি থাকে। ছাত্রজীবনে অনেক ইতিবাচক -নেতিবাচক উভয়ই বেশ প্রভাব ফেলে।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বটবৃক্ষের মতো যেমন বাবা মা ছায়া দিয়ে থাকে। তেমনি ক্যারিয়ার গোছনোর ক্ষেত্রে ক্লাবগুল ভূমিকা রাখে। বন্ধু বান্ধবের মধ্যে গ্রুপ স্টাডি সহ যে শিক্ষামূলক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে সম্পৃক্ততা দেখা যায় তা আরো সূদুর প্রসারী করে আমাদের ক্যারিয়ারকে।
আমি মূলত বিভিন্ন সংগঠন করার সুবাদে সাংগঠনিক যে কার্যক্রম তা করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু যোগাযোগ দক্ষতা আর সঠিকভাবে উপস্থাপন কলাকৌশল ধীরে ধীরে এই ক্লাব থেকে জানার ও শেখার চেষ্টা করছি। ছাত্রজীবনের পরবর্তী সময়গুলো চাপ, টেনশন এমন কি কষ্টে পরিণত হয় ক্যারিয়ারের ভালো অবস্থান না হবার ফলে। আমি একান্তভাবে মনে করি কেউ যদি ক্যারিয়ার ক্লাবে যুক্ত থাকে সে নিজেকে উন্নতি করতে পারবে। ‘টুডে অর টু মোরো’ – সফল হবেই। যে যাত্রায় নাহি ভয়, আছে শুধু উজ্জীবিত করার প্রয়াস। যেখানে আছে শেখার প্রত্যয়, নেই ভীরুতার উত্তাপ। সৎভাবে লেগে থাকলে স্বপ্নজয় হবেই।
মো. সাখাওয়াত হোসেন
সদস্য, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাব
স্নাতক তৃতীয় বর্ষ,
সরকারি আজিজুল হক কলেজ,বগুড়া।
ক্যারিয়ারের সঠিক সংজ্ঞাটা আমার জানা নাই। তবে আমি মনে করি, ক্যারিয়ার মানে শুধুই চাকরি করাটাই নয় এটি মূলত যেকোনো কর্মময় জীবনের একটি অংশ। আমি স্নাতক পড়ুয়া হিসেবে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি, আমার উপলব্ধি হচ্ছে যে কর্মময় জীবনে প্রবেশ করতে তেমন একটা সময় বাকি নাই। অনেক বড় ভাইদের সংস্পর্শে আসার ফলে জানতে পারছি ক্যারিয়ারের সফলতা পাওয়ার পিছনে শুধু পড়াশোনায় না বরং কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমার বিভাগের এফবিসিসি’র সদস্য হবার বদৌলতে আমার উন্নতির বিষয় উপলব্ধি করতে পারছি। কয়েকটি প্রেজেন্টশন আর সেশনের মাধ্যমে যে শেখার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে তা আমি কাজে লাগাতে নিজেকে প্রস্ততের সুযোগ পাচ্ছি।
এই ক্যারিয়ার ক্লাব সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচনে আমাদের ক্যারিয়ার পরামর্শ, পেশাগত ধারণা, যোগাযোগ দক্ষতা সহ কিভাবে একটি মৌখিক পরীক্ষায় বসতে হবে। নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করতে হবে তা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাচ্ছি। শুধু তাই নয়, আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়প্রত্যয়ী হবার ক্ষেত্রে ক্লাবের প্রত্যেক সদস্য প্রত্যেকের অনুপ্রেরণা।
মো. মুজতাহিদ হাসান
সদস্য, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাব
স্নাতক তৃতীয় বর্ষ,
সরকারি আজিজুল হক কলেজ,বগুড়া।
একটা বইয়ে পড়েছিলাম, আগামী দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই, তা নির্ভর করে এখন আমি কি বই পড়ছি, কোথায় অবস্থান করছি আর কোন পরিবেশে সময় পার করছি তার উপর। প্রতঢেকের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে, স্ব স্ব গুণে গুণান্বিত। তবে নিজেকে উপস্থাপন আর নিজের অবস্থা তুলে ধরার ক্ষেত্রে অনেকের কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব অনাগ্রহ দেখায়। শিক্ষা জীবনে নিজেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে ক্লাব সংগঠন করার নাকি বিকল্প নাই বলে সংগঠকদের মুখে শুনে থাকি।
ক্যারিয়ার ক্লাব আমাদের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এতে সন্দেহ নাই। এই ক্লাবগুলি একটি সহায়ক এবং কাঠামোগত পরিবেশ প্রদান করে যেখানে আমরা বিভিন্ন পেশাদার ক্ষেত্র অন্বেষণ করতে পারি, শিল্পের অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশ করতে পারি। ক্যারিয়ার ক্লাবে যোগদানের মাধ্যমে, নেটওয়ার্ক প্রসারিত করতে পারি, সমমনা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি এবং অভিজ্ঞ পেশাদারদের কাছ থেকে শিখতে পারে।
ক্যারিয়ার ক্লাবগুলি প্রায়শই কর্মশালা, সেমিনার এবং নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের আয়োজন করে থাকে। যার ফলে সদস্যরা তাদের জ্ঞান বাড়াতে, নতুন সুযোগগুলি আবিষ্কার করতে এবং তাদের নিজ নিজ কৌশলের সবটুকু দিয়ে শিখতে পারে। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাবের আমার প্রথম সেশনে অংশ নেয়া আমার কাছে ছিল অনবদ্য। আমি সামনে দাড়িয়ে নিজের সম্পর্কে বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। কতটা ভালো বলতে পেরেছি জানি না কিন্তু যে সাহস সঞ্চারিত হয়েছে সেদিন। আমার আত্মবিশ্বাস আরো দৃঢ় করেছে।
রাকিবুল হাসান
সদস্য, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাব
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ,
সরকারি আজিজুল হক কলেজ,বগুড়া।
ক্যারিয়ার বিষয়ক একটি সেমিনারে এক শিক্ষার্থী বলেছিল, আমি আমার জীবনে সবচেয়ে অল্প সময়ে, অল্প বয়সে আমি ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান হতে চাই। তখন বক্তা প্রতি উত্তরে বলেছিলেন, তোমার স্বপ্ন দেখে যদি কেউ নাই হাসলো তাহলে স্বপ্নটা কি? সবাই যেটা ভাবে তুমি তো সেটা ভাববা না। স্রোতে গাঁ ভাসালে চলবে না। তুমি সেইটাই ভাববে যেটা সাধারণ মানুষ ভাবতে পারেনা। তাহলে তুমি নিজেকে আলাদা করে সৃষ্টি করতে পারবে। সেখানেই হবে তোমার সার্থকতা। স্বপ্নটা বড় করতে হবে। চিন্তাটাকে বড় করতে হবে।
আমি জীবন কোথায় যেতে চাই? আমার জীবনের লক্ষ্য আমাকেই নির্ধারণ করতে হবে। সে মোতাবেক কাজ করার প্রত্যাশা সম্ভবনা জাগাতে হবে, কে ঠেকাবে আমাকে? স্বপ্নটাকে যেখানে বড় এবং সেই স্বপ্নের মধ্যে নিজে অনাবিল বিচরণ। জীবনে যত প্রত্যাশা থাকবে তত অর্জনের পাল্লা ভাড়ি হবে। মনিষীরা বলেন, ছোট স্বপ্ন ছোট মানুষ আর বড় স্বপ্ন বড় মানুষ।
আমরা প্রত্যেকে একমাত্র নিজেকেই ভালোভাবে চিনি। ভালো কিছু করতে হলে যেখানে আমাদের দক্ষতা উন্নয়নের জুরি নাই। আর এজন্যই আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব দ্রুত ভাবতে হবে। আমরা আমাদের ক্যারিয়ার গঠনে বিভিন্ন ক্যারিয়ার সংগঠনের মাধ্যমে আমরা আমাদেরকে তৈরি করে নিতে পারবো দক্ষ মানুষ হিসেবে। তাহলে, আমাদের ভেতরে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা তৈরি হবে।বড় স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে জীবনে অনেক বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়। আর এজন্য কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এই দক্ষতা গুলো আমরা বিভিন্ন ক্যারিয়ার ক্লাবের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ হিসেবে প্রস্তত করতে পারবো।
কে এম জিয়াদ হাসান,
সদস্য, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ক্লাব
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ,
সরকারি আজিজুল হক কলেজ,বগুড়া।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply