সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

লিফট, এস্কেলেটর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবকে স্বাগত জানালো শিল্পোদ্যাক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩
  • ১৯১ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে লিফট ও এস্কেলেটর আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তারা। তাদের মতে, সময়োপযোগি এই নীতি সহায়তায় দেশে লিফটের মতো উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন উৎপাদনমুখী ভারী শিল্পখাত বিকশিত হবে। বাড়বে এ খাতের বিনিয়োগ। প্রচুর কর্মসংস্থানের এক নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। দেশের আমদানি ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপও অনেকাংশে কমবে।

গত ১ জুন অর্থমন্ত্রীকর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেটে বিদেশ থেকে লিফট/এলিভেটর, এস্কেলেটর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি, আমদানি বিকল্প লিফট উৎপাদনে দেশীয় শিল্পে কর ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা হয়। বাজেটে শিল্পোন্নয়নবান্ধব নীতি সহায়তা প্রস্তাব করায় অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশীয় লিফট উৎপাদকরা।

শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের প্রেক্ষিতে দেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনার সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপকহারে। সেইসঙ্গে লিফট, এস্কেলেটরের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। লিফট এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পণ্য। দেশে এ খাতে বার্ষিক এক হাজার কোটি টাকার বেশি বাজার রয়েছে। কয়েকবছর আগেও এই বিশাল বাজারের পুরোটাই ছিলো আমদানি-নির্ভর। তবে শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ২০১৮ সালে দেশে বাণিজ্যিকভাবে লিফট উৎপাদন শুরুর পর আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পাচ্ছে। এখন কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানও লিফট উৎপাদন শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই খাতের অভ্যন্তরীণ বাজারে বর্তমানে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মার্কেট শেয়ার ২৫ শতাংশেরও বেশি। সরকারের নীতি সহায়তায় উচ্চ গুণগতমানের লিফট তৈরি ও বাজারজাতের মাধ্যমে অতি দ্রæতই সিংহভাগ মার্কেট শেয়ার অর্জন করে নিতে সক্ষম হবে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তারা জানান, বাংলাদেশ এখন লিফট উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। লিফটের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পুরোটাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পূরণ করতে সক্ষম। তাই দেশীয় লিফট, এস্কেলেটরের উৎপাদন শিল্প সুরক্ষা ও বিকাশের পথ সুগম করতে এসব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করা এখন সময়ের দাবি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে দেশের ইলেক্ট্রোনিক্স, মেগাট্রনিক্স, অটোমোবাইলসহ ভারী ইন্ডাস্ট্রিজগুলোকে নীতি সহায়তা দেওয়া খুবই ভালো উদ্যোগ। এতে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি দেশীয় শিল্পে কর্মসংস্থানের আরো সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনের ফলে সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। আমরা দেশীয় শিল্পকে প্রোমট করতে চাই। তাই এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের নীতি সহায়তায় আমদানি বিকল্প লিফট উৎপাদনকারী দেশীয় শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনোমিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এটি শিল্পবান্ধব এবং কর্মসংস্থানবান্ধব বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানি এবং দেশীয় বাজার নির্ভর শিল্পের ক্ষেত্রে নানা রকম সুবিধা দেওয়া হয়েছে। দেশের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি বরাবরই ভালো করছে। বাজেটে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আগামীতেও এসব প্রতিষ্ঠান সুফল পাবে আশা করছি।

শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, গাড়ির পরে দেশে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আমদানি পণ্য হচ্ছে লিফট, এস্কেলেটর। এমনিতেই বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে দেশে উৎপাদিত হয় এমন পণ্যের আমদানি কমানোর কোনো বিকল্প নেই। সেই বিবেচনায় আগামি অর্থবছরের বাজেটে লিফট, এস্কেলেটর আমদানির উপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব সময়োপযোগি এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

সরকারের এই নীতি সহায়তায় লিফট, এস্কেলেটরে মতো দেশীয় ভারী শিল্প সুরক্ষার পাশাপাশি বিকাশ আরো ত্বরান্বিত হবে। এই খাতে বাড়বে দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের বিনিয়োগ, ফলে দেশের জিডিপি বাড়বে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশের পরিবর্তে দেশেই বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দেশের মেধা দেশেই থাকবে। এগিয়ে যাবে দেশীয় শিল্পখাত। কমবে আমদানি ব্যয়। সাশ্রয় হবে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS