নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ১ লা মে মহান মে দিবস। এই দিনটি শ্রমিক শ্রেণীর একান্ত নিজস্ব দিন। সারা দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেণী। এই দিনে দেশে দেশে পুঁজিবাদী শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে শ্লোগানে মিছিলে সমাবেশে মজুরি দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার আওয়াজ তোলে। মে দিবসের দিনটিতে পুঁজিবাদীদের সেবাদা সরকার ভয়ে থাকে, ভয়ে থাকে শিল্প-কারখানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রেণী।
আজ থেকে ১৩৭ বছর পূর্বে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার হে মার্কেটের শ্রমিকরা কাজের ঘন্টা কমানোর দাবীতে, সংগঠন করার অধিকারের দাবীতে সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁদের নাবী ছিল ন্যাস। ৮ ঘন্টা কাজ, ৮ ঘন্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘন্টা আমোদ-প্রমোদ। সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পুলিশ শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলি করে কয়েকজন শ্রমিককে হত্যা করেছিল। পুলিশ নিজে সমাবেশে বোমা ফাটিয়ে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। শ্রমিক নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল। শ্রমিক আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মার্কিন সরকার ও পুঁজিবাদীদের সে চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছিল। শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকদের এই বীরত্বপূর্ণ কাহিনী সুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৮৮৯ সাল থেকে সারা দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেণী ১লা মে-র দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও শ্রমিক সংহতির দিন হিসেবে পালন করে আসছে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও সরকার মে দিবস পালন করবে। শ্রমিক শ্রেণীর লড়াই-সংগ্রামের দিনটিকে একটি ছুটির দিন হিসাবে পালন করবে। যে মালিক শ্রেণী শ্রমিকদের উপর চরম মঞ্জুরি শোষণ ও নির্যাতন করে তাদেরই সাথে শ্রমিকদের ঐক্যের কথা বলবে সরকার। সরকার ও মালিক শ্রেণীর দালাল সংগঠনগুলো ঢোল বাদ্য বাজিয়ে রাস্তায় নেচে বেড়াবে। চলবে পুঁজিবাদীদের শোষণ আড়াল করার চেষ্টা। পুঁজিবাদীদের হয়ে শ্রমিকদের উপর সরকারী হামলা নির্যাতন আড়াল করার চেষ্টা।
সরকারী দলের সাথে যুক্ত ট্রেড ইউনিয়নগুলো মে দিবসে সরকারের গুণগান করবে। শ্রমিক শোষণ, শ্রমিক নির্যাতন, শ্রমিক ছাঁটাই, বেকারত্ব, পৃষ্ঠন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, বাজারি শোষণ, পুলিশী নির্যাতন বিষয়ে নীরব থাকবে । সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা এনজিওগুলো পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের তীব্র ঘৃণা ও বিক্ষোভের আগুনে পানি ঢেলে দিতে কর্মসূচী হাতে নিবে। পুঁজিবাদীদের শোষণ লুন্ঠন কাজে মদতদানকারি সরকার ও বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শ্রেণী সংগ্রাম বিকশিত না করে এক শ্রেণীর ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক আন্দোলনকে শুধুমাত্র মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের ভিতর আটকে রাখবে। ফ্যাসিবাদী শাসন ধিরো জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শ্রমিক শ্রেণীর মুখ ঘুরিয়ে রাখবে।
দেশ বর্তমানে পুঁজিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট রূপ শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনে শাসিত ও শোষিত। পুলিশের অনুমতি ছাড়া দেশের কোথাও জনগণের সভা সমাবেশ মিছিল, সংগঠন করার কোনো স্বাধীনতা নেই। কারখানায় কারখানায় শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। সমাজে আছে চরমতম নীরব শোষণ, বেপরোয়া সন্ত্রাস। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের যে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা একদিন এদেশে ছিল, তা দেশ থেকে উঠে গিয়ে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতারণা মূলক নির্বাচনে ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের পূর্ব রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতাসীনরা গত ১০ বছর একটানা গণী নিজেদের দখলে রেখেছে। বর্তমান জাতীয় সংসদের ৭০ শতাংশ ব্যক্তিই ব্যবসারী। এদের সমর্থন নিয়ে গঠিত হয় এদেরই সেবাদাস সরকার। জনগণের কাছে জবাবদিহিতে অবাধ্য গণবিরোধী এই ধরনের সরকার ও জাতীয় সংসদের বিরুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলন বেগবান করা এক গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত কাজ সংগ্রামী শ্রমিক ভাই ও বোনেরা, ফ্যাসিবাদী শাসন ও ব্যবসায়ী শ্রেণীর শোষণ পৃষ্ঠন এক সূত্রে গাঁথা। একে উচ্ছেদের লক্ষ্যে সংগ্রাম, আন্দোলনে আজ আমাদের শ্রমিকদের এগিয়ে আসতে হবে। বাঁচার দাবীতে আন্দোলনরত শ্রমিক শ্রেণীকে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। নিজেদের দাবী আদায়ে শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামের এক গণতান্ত্রিক রূপ হলো ধর্মঘট। হাসিনা সরকার চলতি জাতীয় সংসদে এই ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে বিল উত্থাপন করেছে।
চরম মজুরি শোষণ, পৃষ্ঠন-দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার, রাষ্ট্রায়ত পাটকল বন্ধ, ভারত চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া আপান প্রভৃতি রাষ্ট্রের সাথে অসম চুক্তি প্রভৃতি করে ক্ষমতাসীনরা দেশের অর্থনীতি রাজনীতিকে এক মহা বিপর্যয়ের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। শ্রমিক শ্রেণীই একমাত্র শ্রেণী যে আন্দোলনের মাধ্যমে এই মহাবিপর্যয় থেকে দেশের শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত অপমানিত নির্যাতিত জনগণকে মুক্ত করার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS