বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

সন্তানকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩
  • ১৮৩ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মামুনকে হত্যার সাথে জড়িত আনসার সদস্য হিরা ও মাহবুবসহ সকলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চায় নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।

সন্তানের চিকিৎসা জন্য ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিউটের নিরাপত্তারক্ষীদের (আনসার সদস্য গণ) পিটুনির শিকার হয়ে গত রবিবার মারা যান রাজধানীর পল্লবীস্থ আদর্শনগর এলাকার বাসিন্দা মো. মামুন। চিকিৎসার জন্য কাউন্টারে টিকিট কাটতে গিয়ে আনসার সদস্য মাহবুব ও হিরার সঙ্গে বাগবিতন্ডা হলে মামুনকে চোর সাজিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব¦ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মামুনের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। মামুনকে চোর সাজানোর অপবাদে তারা হতবাক ও বিস্মিত।

এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি দাবি করে (২৯ মার্চ) বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন পল্লবীস্থ আদর্শনগর এলাকাবাসী।

মামুনের বড় ভাই মাসুদ রানা অভিযোগ করে বলেন প্রথমে বিকালে পুলিশ আমার কাজ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে রাতে মামলার সীল ছাপ্পর ছাড়া মামলার এজাহারের কাগজ দেয় আমার হোয়াটস অ্যাপে। এজাহারের মুল কপি আমি এখন ও পাই নাই। এজাহারের বিবরণ পড়ে জানি আমার ভাই নাকি মাদকাসক্তের চিকিৎসা নিতে গেছেন। সে মাদকাসক্ত এবং সাইকেল চুরি করেছে, তাই তাকে গণ পিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই বিবরণ সম্পূর্ণ মিথ্যা। মাসুদ রানার দাবি, পুলিশ এজাহারের বিবরণ লিখেছে নিজের মতো করে। তবে সিআইডির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্তের আশ^াস দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মামুন হত্যার জন্য হিরা, মাহবুব, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপারসহ যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারের দাবি জানান মাসুদ রানা।

এলকাবাসী মো. মনির হোসেন বলেন-মামুন খুব অমায়িক লোক ছিল। মসজিদে প্রায়ই দেখা হতো। তাকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলবে, ভাবতেই পারছিনা।

সাহিদা বেগম বলেন- মামুন ভায়ের দোকান থেকে আমি প্রতিদিনই সদাই নিতাম। কোন দিন আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নাই। আমার জানা মতে তিনি খুবই ভালো লোক ছিলেন। আমাকে ম্যাডাম বলে সম্বোধন করতেন।
মামুনের ছেলে মাহিব হোসেন বলেন- রবিবার সকালে বোন মরিয়মকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য আম্মু-আব্বু শিশু হাসপাতালে যায়। পরে আম্মু ও বোন চলে আসে। আমাকে আম্মু বলেছে ডাক্তার দেখায় নাই। আব্বুর সাথে হাসপাতালের কর্মচারীদের বাগবিতন্ডা হওয়ায় ডাক্তার না দেখিয়ে তাদের বাসে তুলে দিয়েছে। আর আব্বু তাদের সাথে কথা বলে আসবে। একটু পর শুনি আব্বু মারা গেছে।  

আদর্শনগর প্লট মালিক সমিতির সভাপতি মো: বাচ্ছু বেপারী বলেন- ঢাকা শিশু হাসপাতালের ভিতরে মামুনকে যারা নিমর্মভাবে হত্যা করেছেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসি দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন-মামুনের সন্তানের দায়-দায়িত্ব কে নিবে ? তাই এই পরিবার যাতে ছেলে মেয়েকে নিয়ে চলতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।

জনস্বার্থ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক আমিনুল ইসলাম বুলু বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় এমন মৃত্যু কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, সংবিধানে প্রদত্ত জীবনের অধিকার এভাবে কেড়ে নেওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু কিছু খারাপ বা দৃষ্ট লোকের কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এতে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা ম্লান হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের মতো জায়গায় চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা এই দেশের উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলাকে নসাৎ করার জন্য কাজটা করেছেন। যাতে বিশে^র অন্যান্য দেশ এই দেশটাকে খারাপ নজরে দেখেন সেই কাজটাই তারা করেছেন।

অথচ এই মার্চ মাসের ২১ তারিখে যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইডে প্রকাশিত বাংলাদেশে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড কমেছে বা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু  সেই সুনামকে নষ্ট করার জন্য মামুনকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। যাতে দেশের ভাবমৃর্তি নষ্ট হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS