ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তুরস্কে ভারি বৃষ্টি ও তুষারপাত শুরু হয়েছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া বিধ্বস্ত অবকাঠামোর কারণেও ঠিকমতো উদ্ধার কাজ চালাতে পারছেন না উদ্ধারকর্মীরা। বৃষ্টি ও তুষারপাতে খোলা আকাশের নিচে বিপাকে পড়েছে ভূমিকম্পের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষ।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ৭.৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। এর ১১ মিনিট পরই আঘাত হানে ৭.৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প। তুরস্ক ছাড়াও এই ভূমিকম্প পাশের দেশ সিরিয়া, সাইপ্রাস ও লেবাননেও অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, এদিন ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল কাহরামানমারাস শহরে। প্রথম ভূমিকম্পের পর অন্তত ১০০টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে।
স্মরণকালের ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার হাজার হাজার ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। রেড ক্রিসেন্টের তথ্য মতে, তুরস্কে ধ্বংস হয়েছে ৫ হাজারের বেশি ভবন। আরও কয়েক হাজার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ এখন কার্যত উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্পের পরপরই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন উদ্ধার অভিযান চলেছে। রাতের অন্ধকার নেমে এলেও তা বন্ধ হয়নি। তবে এর মধ্যেই শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি ও তুষারপাত। যার ফলে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তুপের নীচ থেকে আটকেপড়াদের আকুতি ও চিৎকার শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অনেকেই বাঁচার আকুতি জানালেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে যেতে পারছে না।
দেনিজ নামের ওই বাসিন্দা বলেছেন, ‘তারা বলছে আমাদের বাঁচাও কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না।’ বিদ্যুৎ নেই, সাথে বৃষ্টি ও ঠাণ্ডার কারণে আটকে পড়া অনেককেই উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।
বিধ্বস্ত অবকাঠামোর কারণেও ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, তুরস্কের গাজিয়ানতেপ, হাতায়, আদানা ও কাহরামানমারাস বিমানবন্দর এলাকায় সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কারণ কয়েকটি বিমানবন্দরে রানওয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।
হাইওয়েগুলোরও একই অবস্থা বিশেষ করে হাতায় ও গাজিয়ানতেপের মাঝের প্রধান সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, এ কারণেই উদ্ধারকর্মীদের পক্ষে ওই এলাকায় পৌঁছানো ও মানবিক ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে এর মধ্যেও থেমে নেই উদ্ধারকর্মীরা। আটকেপড়াদের প্রাণ বাঁচাতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি উদ্ধারকর্মীরা।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা ওরহান তাতার বলেছেন, মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তুরস্কে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৩৮১ জনে পৌঁছেছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত তুরস্কে ১১ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন। তারা আহতদের পরিবহন এবং অনুসন্ধান অভিযানে দ্রুততর করার জন্য কমপক্ষে ১০টি জাহাজ এবং ৫৪টি বিমান ব্যবহার করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply