শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত সেলসফোর্স বাজারে আনলো এজেন্টফোর্স ৩: এআই এজেন্ট পরিচালনায় সহজ সমাধান ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও ১ দর বৃদ্ধির শীর্ষে দেশ গার্মেন্টস প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তি ও স্বীকৃতির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ ও দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই- বাংলাদেশ নারী মঞ্চ নাসিরনগরে হত্যা মামলার আসামী ধরতে ওসি’র গড়িমসি, ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন লেনদেনের শীর্ষে বিচ হ্যাচারি রেকিট বেনকিজারের নগদ লভ্যাংশ বিতরণ গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভা ০৭ জুলাই

শত বাধা পেরিয়ে আজ বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৭৮ Time View

বরিশাল প্রতিনিধিঃ আজ বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। প্রথমে চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ ভাবে করতে পারলেও ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে কর্মসূচির পূর্বে পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পড়ে দলটি। বরিশালেও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সপ্তাহ পূর্বেই ৪ ও ৫ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। একই সময় তিন চাকার যানেরও ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

সর্বশেষ লঞ্চ স্পিডবোট বন্ধ করার ঘোষণা এসেছে। এত প্রতিবন্ধকতার পরেও বিএনপির টার্গেট বরিশালে রেকর্ড গড়ার। এর আগের চারটি বিভাগীয় গণসমাবেশের পূর্বে নানান প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় বিএনপিকে। সেই প্রতিবন্ধকতার কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই বরিশালে পৌঁছেছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। এত প্রতিবন্ধকতার বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটেছে। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় উজ্জীবিত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিভাগীয় বাকি সমাবেশগুলোতে বাধা দিয়েও জনস্রোত ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে সমাবেশ সম্পূর্ণ করেছে বিএনপি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাধার মুখে যে পরিমাণ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি হয়েছে, বিএনপি নেতারা বলছেন, বরিশালের তার চেয়ে বেশি হবে। এরমধ্য দিয়ে বরিশালে বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশে যাতে মানুষ আসতে না পারে সেজন্য ৪ ও ৫ নভেম্বর সড়ক পথের সব ধরনের গাড়ি বন্ধ রাখতে সরকারের নির্দেশে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা যে সকল হোটেলে অবস্থান নিয়েছে সেখান থেকে বের করে দেওয়ার হচ্ছে। এমনকি বাড়ি বাড়ি পুলিশ রেড দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন বলেও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। তবে যে কোনো মূল্যে গণসমাবেশ সফলের প্রস্তুতি নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

তারা বলছেন, এতকিছুর পরেও সমাবেশে জনতার ঢল নামবে। জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া মহানগরীর মধ্যে নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ স্থলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। এখানে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, আন্দোলন এখন এমন একটি পর্যায়ে গিয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গ্যাস বিদ্যুতের জন্য মানুষ দিশেহারা। সাধারণ মানুষ এখন অসহায় তারা আওয়ামী লীগের লুটপাট, অত্যাচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই অবৈধ সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতা যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেটার প্রতিফলন ৫ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ কোনো বাধায় কাজ হবে না। চারদিন যাবত বরিশালের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা কর্মীরা চলে এসেছে। আমরা আশা করব এটা গণসমাবেশ নয়, মহাসমাবেশে পরিণত হবে। বরিশালের সমস্ত রাস্তাঘাট স্তব্ধ হয়ে যাবে। যতই বাধা দেওয়া হোক সমাবেশ সফল করতে মানুষ আসবেই। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল ভর্তি হয়ে গেছে। বরিশাল শহরের নেতাকর্মীরা তাদের বাসা-বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছে।

গাড়ি লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়াতে সমাবেশে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, প্রভাব পড়ার জন্যই তো এত অপচেষ্টা, আমরা ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল করব। সকল অপচেষ্টা, অপকৌশল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, খুন, গুমের বিরুদ্ধে, নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আমাদের এই সমাবেশ। মানুষ যে তাদের চায় না এটা সমাবেশের মধ্য দিয়েই প্রমাণ হবে। মানুষ সকল বাধা পেরিয়ে চলে আসবে। আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো, গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী বরিশালে চলে এসেছে। মাঠের মধ্যে রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া মিছিল এভাবেই চলছে। পাকিস্তানও মুক্তিযুদ্ধের সময় সকল কিছু বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু কোনো লাভ হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ যে লক্ষ্য সেটা এ সরকার গায়েব করে দিয়েছে। এ সরকার থেকে সেটা ফিরিয়ে আনার জন্যই তাদেরকে সরে যাওয়া দরকার। মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে তারা হাজারো বাধা অতিক্রম করে সমাবেশ সফল করবে। তারপর জন রায় দিবে যে তোমাদেরকে আর প্রয়োজন নেই। সেটার প্রমাণ হচ্ছে সকল বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া।

আলাল বলেন, এখন হোটেলগুলো থেকে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন থানায় রাতে পুলিশের রেড চলছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে, ভয় দেখানো হচ্ছে পথে পথে। এই হচ্ছে অবস্থা কিন্তু কোনো বাধাই কাজ হবে না। ইনশাল্লাহ বরিশালের সমাবেশ অন্য যেকোনো সমাবেশ থেকে উচ্চতায় পৌঁছাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, ময়মনসিংহ, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যেভাবে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে বরিশালেও তার ব্যতিক্রম নয়। গাড়ি বন্ধ করার পরেও সমাবেশ তো আটকে থাকেনি। পূর্বের সমাবেশগুলো সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে সফল করেছি বরিশালেও সফল করব।’

বরিশালে খেয়া নৌকাও বন্ধ, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা


বাস-লঞ্চ এবং থ্রি হইলার বন্ধের পর এবার বরিশালের বিভিন্ন স্থানে খেয়া নৌকা চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে নগরীর চরকাউয়া খেয়া এবং কাটাদিয়া খেয়া চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এই খেয়া নৌকায় চলাচল করেন হাজার হাজার মানুষ। আকস্মিক খেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। রোগী পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে খেয়াঘাট কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশালের সকল রুটে বাস, লঞ্চ এবং থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধের খবর আগেভাগেই জেনে যায় জনসাধারণ। শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে খেয়াপারাপারও। এতে চরকাউয়া এবং কাটাদিয়া ঘাটের খেয়া যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। জরুরি রোগী পরিবহনও বন্ধ রয়েছে খেয়া নৌকায়। গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। কেন কার নির্দেশে খেয়া বন্ধ হয়েছে তাও জানাতে পারেননি কেউ। খেয়াঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন চরকাউয়া খেয়াঘাট থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। এখন খেয়া বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিএনপির গণসমাবশে লোকসমাগম ঠেকাতে লঞ্চ-বাস ও থ্রি হুইলারের পর খেয়া নৌকাও বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। হেঁটে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা: সড়ক ও নৌ-পরিবহনের ধর্মঘট উপেক্ষা করে হেঁটে সমাবেশস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) এভাবেই অনেকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ প্রবেশদ্বারে এসে পৌঁছেছে শনিবারের সমাবেশে যোগ দিতে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে কোনো রুটের লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করেনি। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে লঞ্চ, বাস, মাইক্রোবাসসহ যান্ত্রিক থ্রি-হুইলার চলাচল। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে আমাদের কর্মসূচিতে অসহযোগিতা করবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারের কোনো বাধাই বিএনপি নেতাকর্মীদের দমাতে পারবে না। বাউফল থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ভ্যানে করে দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু এখন রূপাতলী থেকে হেঁটে বেলস পার্ক যাচ্ছি। সব বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছি। নলছিটি থেকে আসা বিএনপিকর্মী হারুন বলেন, রাতভর আমাদের উপজেলার নদীতে ট্রলারে করে নেতাকর্মী এসে নেমেছে। এখন হেঁটে বরিশাল এসেছি। বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বরিশাল-ভোলা রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। আজ সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ সকল রুটে কোনো লঞ্চ যাত্রী নিয়ে নদী বন্দর ত্যাগ করেনি। আবার কোনো লঞ্চ বরিশালে আসেনি। তবে শুক্রবার ভোররাতে ৪টি লঞ্চ ঢাকা থেকে যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে এসে পৌঁছেছে। এ নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটের ৬টি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করা রয়েছে। এগুলো রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। পরিবহন ধর্মঘট থাকায় বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী থেকে কোনো রুটে বাস চলাচল করছে না। সেইসাথে অন্যান্য যানবাহনও বন্ধ রয়েছে। এতে করে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে রয়েছে। পারভীন আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার জন্য কোনো কিছুই পাচ্ছি না। আসলে রাজনৈতিক নেতাদের কারণে আমরা বলির শিকার হচ্ছি। আরেক যাত্রী ষাটোর্ধ্ব খালেক পহলান বলেন, রিকশায় এত ভাড়া চাইছে যা দেওয়া অসম্ভব। এভাবে সব বন্ধ করে দেওয়া উচিত হয়নি।

একমাঠেই দুই মঞ্চ বিএনপি-প্রশাসনের চলছে সাজানোর প্রস্তুতি-

বরিশালে একমাঠেই চলছে বিএনপি-প্রশাসনের পৃথক মঞ্চ সাজানোর কাজ: নগরের বান্দরোডস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে একসঙ্গে চলছে বিএনপি ও প্রশাসনের পৃথক দুটি কর্মসূচির জন্য মাঠ গোছানো, মঞ্চ তৈরি ও প্যান্ডেল সাজানোর কাজ। উদ্যানের পূর্বপ্রান্তে স্থায়ী মঞ্চ ধরে চলছে স্থানীয় প্রশাসনের প্যান্ডেল তৈরির কাজ। এর বেশ খানিকটা দূরে উত্তর পশ্চিম প্রান্তে চলছে বিএনপির বিভাগীয় মহা সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ। মাঠের দুটি জায়গায়ই বালু ফেরার কাজও করছেন শ্রমিকরা। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। যেখানে প্যান্ডেল করা হচ্ছে সেখানে দায়িত্বশীল কেউ নেই। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাঠে আগামী ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাই বালু ফেলে মাঠ ঠিক করা হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেলের কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে বরিশালের ১৬টি সেতু রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাই বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মূলমঞ্চ ঘিরে চলছে তার প্রস্তুতি। শনিবার (৫ নভেম্বর) আবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণ সমাবেশ। আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হলেও মাঠের পুরো অংশ বিএনপি ব্যবহার করতে পারছে না। যে কারণে মাঠের স্থায়ী মঞ্চ না পেয়ে পশ্চিম উত্তর প্রান্তে কাঠ-বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করছে দলটি। গণ সমাবেশের আয়োজন সম্পর্কে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, গত সোমবার আমাদের বেলস পার্কের (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। মাঠের একাংশে তাদের একটি মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে আমাদের জনসভা করতে হবে। স্থায়ী মঞ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে না, যতটুকু অংশ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে তাতে আমাদের জনসমুদ্রের অর্ধেকও সংকুলান হবে না। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন। বরিশালে উদ্বোধন হবে ১৬টি সেতু। সে লক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অনুষ্ঠান হলেও গোটা বঙ্গবন্ধু উদ্যান বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। উদ্যানের স্থায়ী সভামঞ্চ ঘিরে নেতাকর্মীদের পোস্টার লাগানো হয়েছে।

ধর্মঘটের নামে ‘সন্ত্রাস ও শ্রমিক হয়রানি’ বন্ধের দাবি-


বরিশালে ধর্মঘটের নামে ‘সন্ত্রাস ও শ্রমিক হয়রানি’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতি দেন পরিষদের বরিশাল জেলা শাখার সংগঠক দুলাল মল্লিক ও মানিক হাওলাদার। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা সারাদেশে বিআরটিএ থেকে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারকে লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। এছাড়া মহাসড়কে থ্রি হুইলারের জন্য আলাদা লেন চালুর কথা বলছি। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, ৪ ও ৫ নভেম্বরের ধর্মঘট শ্রমিকের স্বার্থে ডাকা হয়নি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডাকা হয়েছে।এই ধর্মঘটে রূপাতলী, নথুল্লাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কালাম-আফজালসহ কতিপয় চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছে।


সংগ্রাম পরিষদের স্টিকারযুক্ত গাড়িতেও দেওয়া হচ্ছে বাধা। প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার জন্য শ্রমিকের রুটিরুজির ওপর এভাবে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ করা অন্যায় ও অমানবিক। বিবৃতিতে অবিলম্বে ধর্মঘট ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়। বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ। এর আগেই বরিশালে লঞ্চ, স্পিডবোট, বাস, মাইক্রোবাস, থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ করা হয়। এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতি বলছে, মহাসড়কে থ্রি হুইলার ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধের দাবিতে তারা ধর্মঘট ডেকেছে। বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনসহ অনুমোদনহীন নসিমন-করিমন ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এগুলো বন্ধ করার দাবিতে চলছে ধর্মঘট। এদিকে পাল্টা বাসমালিক-শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে ৪ ও ৫ নভেম্বর সব ধরনের তিন চাকার যানের ধর্মঘট ডাকে বরিশাল জেলা মিশুক, বেবিট্যাক্সি, টেক্সিকার ও সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়ন। তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুক জানান, তাদের গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই এই ধর্মঘট।

মাঠেই দুটি জামাতে জুমার নামাজ পড়েছে নেতাকর্মীদের-

বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু উদ‌্যান (বেলস পার্ক) মাঠেই পৃথক দুটি প্যান্ডেলে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। একসাথে হাজারো নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা যায় জুমার নামাজে। নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন নামাজ পরিচালনা করেন। নামাজে অংশ নেওয়া ভোলার দৌলাতখান সৈয়দ পুর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা মো. স্বপন সিকদার বলেন, আমি ভোলার দৌলাতখান থেকে আসছি। নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে একসাথে জুম্মার নামাজ আদায় করেছি। তাছাড়া ভোলা থেকে আসতে ভেদুরিয়া ঘাটে আমাদের অনেক নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। আমরা স্পিড বোটে ওঠার পরে আমাদের দিকে লাঠি ছুড়ে মারছে। ঘাট থেকে নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ কিছুই ছাড়তে দেয় নাই। খুব কষ্ট করে এই পর্যন্ত আসছি। গেীরনদী মাহিলারা ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পদাক সজল বলেন, একসাথে অনেক মানুষ নামাজ আদায় করতে দেখে ভালো লেগেছে। সবাই নেতাকর্মীদের নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে নামাজ আদায় করেছে। বরগুনা জেলা যুবদলের সাহিত্য প্রকাশনী সম্পাদক রনি আহমেদ নাসির বলেন, একসাথে এত নেতাকর্মীরা অনেক দিন পর এভাবে মাঠে নামাজ আদায় করেছি। প্রখর রোদে গরমে অনেক কষ্ট হলেও ভালো লাগছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সমাবেশস্থলে আসতে অনেক বাধা বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে সমাবেশ যে পরিমাণ লোকজন অংশ নিয়েছে তা দেখে সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এছাড়া সমাবেশস্থলে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা প্রখর রোদ উপেক্ষা করতে মাঠের চারপাশে গাছতলা, তাবুর নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে যার সামর্থ অনুযায়ী খাবার কিনে খাচ্ছেন।


বরিশালে সড়কে সড়কে পুলিশের চেকপোস্ট


বরিশালের বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। তল্লাশি চালানো হচ্ছে যানবাহনে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, আমরা আমাদের নিয়মিত কাজ করছি।

বরিশালে বিএনপির ভরসা নৌকা-

বরিশালে শুরু হয়েছে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট। শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘটের কারণে জেলা শহরের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক ও লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে শনিবার ব‌রিশালে বিএন‌পির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বরিশালে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। অর্থাৎ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির ভরসা নৌকা। আমতলী-বরিশাল মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরগুনার আমতলী থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিকল্প নদী পথে শুক্রবার ভোররাতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চরে বরিশালে পৌঁছান।


মাঠেই রান্না মাঠেই খাওয়া-দাওয়া নেতাকর্মীদেরঃ


বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। সমাবেশকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু উদ‌্যানের প্রায় প্রতিটি স্থানেই দেখা গেছে চাল ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে তার পাশে প্যান্ডেলে বসেই খাওয়া সারছেন। পুরো মাঠ ঘুরেই দেখা গেছে জায়গায় জায়গায় চলছে খিচুড়ির আয়োজন। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতা কর্মীরা সাথে করে রান্নার সরঞ্জাম ও বাবুর্চি নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছে অনেকে। আবার কেউ কেউ বাহিরে থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার তৈরি করে আনছেন। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলা থেকে ৫ শ’ নেতা কর্মী এসেছি। তাদের সবার জন্যই দুপুরে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা দুই দিনের রান্না করার সকল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. স্বপন হাওলাদার বলেন, যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় দুই দিন আগেই ইউনিয়নের সকল নেতাকর্মীর নিয়ে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়েছি। এখন সবার জন্য চলছে রান্নার কাজ। জুম্মার নামাজ শেষে সবাই মাঠে বসেই খাওয়া দাওয়া করেছি।বরগুনা জেলা যুবদলের সাহিত্য প্রকাশনী সম্পাদক রনি আহমেদ নাসির বলেন, একসাথে অনেক নেতাকর্মীরা পাশাপাশি বসে খাওয়া দাওয়া, এ যেন এক উৎসব আয়োজন। প্রখর রোদে গরমে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তারপরও সমাবেশ সফল করতে সব কিছু মেনে নিতে রাজি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS