নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন।
কাঠমান্ডু থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ৭৩ বছর বয়সী কার্কি প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেলের কাছে শপথ গ্রহণের সময় বলেন, ‘আমি, সুশীলা কার্কি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার কর্তব্য পালনের জন্য দেশ ও জনগণের নামে শপথ গ্রহণ করছি।’
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে কূটনীতিক ও কিছু সাবেক নেতার উপস্থিতিতে আয়োজিত একটি ছোট অনুষ্ঠানের পর, পৌডেল কার্কিকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘অভিনন্দন! আমরা আপনার ও দেশের সাফল্য কামনা করি।’
পরে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং ৫ মার্চ, ২০২৬ তারিখে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
৩ কোটি মানুষের হিমালয়ের দেশটিতে চলতি সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর তরুণ দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সমাবেশ দমনের প্রচেষ্টাকালে বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যায় যখন।
২০০৮ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান ও রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ওই সহিংসতায় কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়।
বুধবার সামরিক বাহিনী রাস্তার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়, কারফিউ জারি করে।
সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগডেল এবং পৌডেল দুই দিনের আলোচনার পর এই বিচারকের নিয়োগ দেয়া হয়। যুব প্রতিবাদ আন্দোলনের আলগা ছাতা উপাধিপ্রাপ্ত ‘জেন জি’-এর প্রতিনিধিরাও আলোচনায় ছিলেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক করার জন্য হাজার হাজার তরুণ কর্মী অনলাইন অ্যাপ ডিসকর্ড ব্যবহার করেছিলেন এবং পরবর্তী নেতা হিসেবে কার্কির নাম ঘোষণা করেন।
লাল শাড়ি পরিহিত কার্কি শপথ গ্রহণ করেন। তবে তিনি আর কোনও বক্তৃতা দেননি।
তিনি হেসে বারবার হাত চেপে প্রণাম জানিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
জেন জি-এর বিক্ষোভকারী অমৃতা বান বলেন, ‘এটি বিজয়ের মুহূর্ত। অবশেষে ক্ষমতার শূন্যতা কেটেছে।’
যুব বিক্ষোভকারী প্রধান দল হামি নেপাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে পোস্ট করেছেন, ‘আমরা এটা করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানাই।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বলেছে, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং কার্কির নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে।
নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আশাবাদী যে, এটি শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
‘নেপাল আরও উন্নত হোক’
বিশ্বব্যাংকের মতে, নেপালে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে এ বিক্ষোভ হয়। সেখানে ১৫-২৪ বছর বয়সী মানুষের এক-পঞ্চমাংশ বেকার, মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ১ হাজার ৪৪৭ ডলার।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার ফলে দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের দমন-পীড়নে কমপক্ষে ২১ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।
বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার সংসদ, প্রধান সরকারি ভবন ও একটি হিলটন হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে।
কমিউনিস্ট পার্টির ৭৩ বছর বয়সী নেতা কেপি শর্মা অলি ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
পুলিশ মুখপাত্র বিনোদ ঘিমিরে বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলার সময় কারাগার থেকে পালিয়ে আসা সাড়ে ১২ হাজারের বেশি বন্দী ‘এখনও পলাতক।’
নেপালের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বিদ্রোহের সময় লুট করা শতাধিক বন্দুক উদ্ধার করেছে, সেই সময় বিক্ষোভকারীদের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে দেখা যায়।
শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো রাজধানী কাঠমান্ডুর শান্ত রাস্তায় সেনা টহল অব্যাহত থাকে।
৪০ বছর বয়সী একজন রঙিন-সজ্জাকার নবীন কুমার দাস বলেন, ‘আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম এবং পরিবারের সঙ্গে আমার বাড়িতে আটকে ছিলাম, বের হইনি।’
২৪ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী জেমস কার্কি বলেন, তিনি ভবিষ্যত পরিবর্তনের জন্য আশাবাদী।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই আন্দোলন শুরু করেছি, যাতে করে আমরা একটি উন্নত নেপাল তৈরি করতে পারি।’
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS