বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

সংস্কারের বিষয়ে মতামত চেয়ে দলগুলোকে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫
  • ৯ Time View

ছয়টি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে মতামত চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘স্প্রেড শিট’ পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলোকে মতামত জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবে কমিশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সই করা চিঠি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠির সঙ্গে ছয়টি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর সারসংক্ষেপ স্প্রেডশিটে ছক আকারে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো—সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো—‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছে।

দ্বিতীয়তটি হলো, প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ছয়টি ঘর রয়েছে। সেগুলো হলো: সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়ন—‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’ ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গা রাখা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়ের কাজটি করছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার। তিনি বলেন, মতামত চেয়ে বার্তাবাহক মারফত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেডশিট’ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে সবার কাছে স্প্রেডশিট পৌঁছেছে বলে তারা জেনেছেন। আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলোকে মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেসব সুপারিশের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে  রয়েছে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্টীকরণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা; একটি স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া; প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে সীমিত করা; দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য করা; একই ব্যক্তি একই সঙ্গে যাতে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা হতে না পারেন তার বিধান করা; ১০০টি আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা; উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতিতে আসন বণ্টন; বিরোধী দলকে সংসদের ডেপুটি স্পিকারের পদ দেওয়া; সরাসরি ভোটে ৪০০ প্রতিনিধির সমন্বয়ে সংসদের নিম্নকক্ষ গঠন; যার মধ্যে নিম্নকক্ষের ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা এবং সেগুলোতে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সরাসরি ভোট করা; দলনিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা; জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন; জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা; নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করা; মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করা ইত্যাদি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই ছয়টি কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার। ঐকমত্য কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই চার্টার’ বা জুলাই সনদ।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS