‘বর্তমান সরকার এতদিনেও আমাদের পাঁচ মিনিট সময়ও দেয়নি, এখন আমরা যারা কমপ্লেইন ফাইল করব, সেসব শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরকার নিরাপত্তা দেবে বলে আশা করছি। কারণ আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, তারা বিগত সরকারের ক্ষমতায় ছিল। শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপনসিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব। এছাড়া তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন, তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব।’
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহিদ সেনা দিবসের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহিদ কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান এই দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনায় ছিলেন শহিদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। এ সময় আরও বক্তব্য দেন শহিদ লে. কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, শহিদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা. মামুন, শহিদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, শহিদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান প্রমুখ।
‘গত প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল ডিভিশনে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি শহিদ পরিবারের সদস্যদের জানা নেই’-উল্লেখ করে সাকিব রহমান বলেন, ‘মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টাতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?’
এছাড়া বিগত সরকারের সময় যারা ক্ষমতায় ছিল তারাই বিডিআর হত্যাকাণ্ডে পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারী মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেইন ফাইল করব।’
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে শহিদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর প্ররোচনায় ও নীলনকশায় শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। শেখ হাসিনা এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরাসরি জানতেন।
সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দ্রুত শেষ করে ঘটনায় জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক। জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সব মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ায় যাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার বিচার ও সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে গাড়িচাপা দিয়ে যদি হত্যাচেষ্টা হয়ে থাকে তাহলে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি।
শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহিদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। তিনি বলেন, গেজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহিদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করা হোক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই এই ঘোষণা দিয়ে ঐদিন দেশ জুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক। ইতিপূর্বের সব তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। অফিশিয়াল গেজেটে নিহত ৫৭ জন বীর সেনানীকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া ও পিলখানা ট্র্যাজেডিকে উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রুত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সব মানুষকে দ্রুত ন্যায়বিচার দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
শহিদ সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু আমরা পদে পদে বঞ্চিত হয়েছি। ২০২০ সালে আমার মায়ের মৃত্যুর সাত দিনের মধ্যে সরকারি বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমাদের বাসা থেকে বের করে দিয়ে কার কী ফায়দা হয়েছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply