ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এখনও পর্যন্ত তিনি সেই দেশেই অবস্থান করছেন। প্রশ্ন উঠেছে— বাংলাদেশ সরকার প্রত্যর্পণের আর্জি জানালে ভারত কি শেখ হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য?
আনন্দবাজার অনলাইন শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এখনও শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের কথা দিল্লিকে বলা হয়নি। কিন্তু কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করায় তিনি সেই রক্ষাকবচ হারাচ্ছেন। সঙ্গে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-য় প্রত্যর্পণ চুক্তি হওয়ার পরে হাসিনাকে ভারত ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য।’
তার কথার জবাব ভারত সরকার দেয়নি। কিন্তু জবাব না-দিলেও দিল্লিতে হাসিনার অবস্থান যে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়াবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিলক্ষণ তা বোঝে। সূত্রের খবর, এ জন্য তৃতীয় কোনো দেশে হাসিনাকে নিরাপদে রাখার একটা তোড়জোড়ও দিল্লির তরফে চলছে।
অবশ্য শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির তেমন কোনো গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে না ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই চুক্তি করা হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে জঙ্গি, পাচারকারী ও চোরাচালানিদের প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে। ২০১৬ সালে এই চুক্তিতে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল। কোনো দেশ যদি মনে করে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হচ্ছে, তবে তারা দাবি মানতে বাধ্য নয়। এখানে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি ভারত যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করে, বলার কিছু থাকতে পারে না। আবার চুক্তির আর একটি ধারায় রয়েছে, প্রত্যর্পণের পরে দীর্ঘ কারাবাস ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যাবে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হাসিনার গোটা পরিবার সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পরে ইন্দিরা গান্ধী তাদের দুই বোনকে আশ্রয় দেন। সময়ের ব্যবধানে ফের শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ সরকারের হাতে ভারত কখনোই তাদের ছেড়ে দিতে পারে না। তাই তৃতীয় কোনো দেশে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply