হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: কাস্তি নদী খননের পরিবর্তে ছড়া (পাহাড়ি ঝিরি) খনন করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে, হবিগঞ্জের মাধবপুরে কাস্তি নদী খননে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদীর পরিবর্তে ছড়া (পাহাড়ি ঝিরি) খনন করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সন্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের ভাঙনরোধ’ শীর্ষক প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তীর ও ঢাল প্রতিরক্ষায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১১টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়। এ প্যাকেজে রয়েছে মাধবপুর উপজেলার ‘কাস্তি নদী পুনঃখনন’ শীর্ষক প্রকল্প। ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ পায় ‘উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল, কক্সবাজার’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের অধীনে ৩০ কিলোমিটার নদী খনন করার কথা।
কাস্তি নদী মাধবপুরের সোনাই নদী থেকে আদাঊর ও বোল্লা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের বলবদ্র মোহনায় গিয়ে শেষ হয়েছে। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩০ কিলোমিটার খননের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উল্লিখিত কাস্তি নদী খনন না করে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে রঘুরন্দন পাহাড় থেকে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের রতনপুরের মধ্য দিয়ে নেমে আসা জেদ্দা ছড়ার ১৫ কিলোমিটার খনন করে। গত বছরের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। তারা এই ছড়াকে নদী দেখিয়ে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেদ্দা ছড়া খনন করতে এলে তারা বাধা দেন। তারা জানান, নোয়াপাড়া ও ছাতিয়াইন ইউনিয়নে কাস্তি নামে কোনো নদী নেই। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে খনন কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জামাল মো.আবু নাছের নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাস্তি নদীর নামে যেখানে মাটি খনন করতে এসেছিল সেটি আমার জমি। তাই মাটি খনন করতে দিইনি। এদিকে কোথায় কাস্তি নদী তা আমার জানা নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নোয়াপাড়া ডাক্তার বাড়ি গেট থেকে রতনপুর-ছাতিয়াইন এলাকায় জেদ্দা ছড়ার কোথাও কোথাও ৫-১০ ফুট গভীর করে খনন করা হয়েছে। আবার কোথাও খনন করা হয়নি। খননের মাটি পাড়ে রাখায় তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবার ছড়ায় চলে যাচ্ছে। দুই তীরে গাছ লাগানোর কথা থাকলেও তা চোখে পড়েনি। রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জলবায়ু গবেষক মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ছোটবেলা থেকে এলাকায় বড় হয়েছি। কাস্তি নদী নামে এলাকায় কোনো নদীর নাম শুনিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড যেটাকে কাস্তি নদী বলে খনন করছে সেটা আসলে রঘুরন্দন পাহাড় থেকে নেমে আস জেদ্দা ছড়া।
নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আতাউল হক মোস্তফা সোহেল বলেন, ইউনিয়নে কাস্তি নামে কোনো নদী আছে বলে জানা নেই। কিছুদিন আগে ইউনিয়নের ডাক্তার বাড়ি গেট থেকে পাউবো জেদ্দা ছড়ায় মাটি খননের জন্য আসছিল। তারা কিছু খনন করে চলে গেছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জের একজন ঠিকাদার আমার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জমা দিয়ে কাজ পেয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। প্রকল্প পরিচালক পাউবো সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘ব্যস্ত আছি’ জানিয়ে পাউবো হবিগঞ্জের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
পাউবো হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের ভাঙনরোধ’ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কাস্তি নদী খনন প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাস্তি নদী খনন না করে অন্য জায়গায় কাজ করেছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ম্যাপ অনুসারে’ কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply