খুলনা মেডিকেল কলেজে (খুমেক) চিকিৎসকদের কর্মবিরতি সাত দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে এ ঘোষণা দেন বিএমএ নেতারা।
নগরীর শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ১ মার্চ ভোর ৬টা থেকে এ কর্মবিরতি পালন করেছে চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি দল, বিএমএ নেতারা, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা একাধিক বার বৈঠকে বসলেও কোনো ধরনের সমাধান আসেনি। এর আগে শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে খুলনার প্রশাসনের পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর শনিবার চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে আশার কথা জানিয়েছিলেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম।
কিন্তু সমস্যার সমাধান না হওয়ায় শনিবার সকালে খুলনা বিএমএ ভবনে আলোচনার টেবিলে বসেছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি দল, খুলনা বিএমএ, বিপিএমপিএ ও ক্লিনিক মালিক সমিতি।
এদিকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন রোগীরা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরার কলোরোয়া থেকে স্ট্রোক করা রোগী মা সাজেদা বেগমকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে এসেছেন আকলিমা বেগম।
তিনি বলেন, মায়ের ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার রয়েছে। গত চার দিন এখানে রয়েছি। এ সময়ে বড় ডাক্তার আসেনি। নার্সরা আসছেন। মা মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চার দিন বসে আছি, আর কয়দিন বসে থাকব জানি না। ঠিকমতো সেবা পেলে মা সুস্থ হয়ে যেত।
হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন শেখ মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, কালিয়া থেকে ডেলিভারী রোগী নিয়ে খালিশপুর ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। সেখানে ডাক্তার না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে বড় ডাক্তার নেই। নার্সরা দেখাশোনা করছেন।
রোগী ভোগান্তির বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, প্রত্যেক দিন হাসপাতালে সাধারণত ১৪০০-১৫০০ রোগী থাকছে। নরমালি ১৫-২০ জন রোগী প্রত্যেকদিনই মারা যায়। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একসঙ্গে কর্মবিরতির কোনো সম্পর্ক নেই।
খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, আমরা যেহেতু ন্যায় বিচার পাইনি তাই, কর্মবিরতি প্রত্যাহারেরও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নাঈম (সাতক্ষীরা সদরে কর্মরত) ও তার সঙ্গীরা ডা. শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। এ ছাড়া তারা অপারেশন থিয়েটারেও ভাঙচুর চালান। এক মাস আগে করা তার মেয়ের অপারেশনে জটিলতার কথা বলে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় ডা. নিশাত বাদী হয়ে এএসআই নাঈমের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন।
তবে যাদের বিরুদ্ধে চিকিৎসক নিশাতের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তারা জানান ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ওই চিকিৎসক শিশুর মাকে কুপ্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না হওয়ায় শিশুর অপচিকিৎসা করেন এবং এতে শিশুটি তার বাম হাতের একটি আঙ্গুল হারায়।
ওই শিশুর মা (সাতক্ষীরা পুলিশের এএসআই মো. নাঈমুজ্জামানের স্ত্রী) নুসরত আরা ময়না বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দফায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানেও তিনি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেয়ার পাশাপাশি সন্তানের চিকিৎসায় অবহেলা এবং তার হাতের আঙুলে পচন ধরার অভিযোগ আনেন। এছাড়া তিনিও সোনাডাঙ্গা থানায় দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply