নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে সক্রিয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করে এমন ৯ (নয়) ফেডারেশনের সমন্বয়ে গত ২১/০১/২০২৩ তারিখ গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবল নামে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের ৮৬% বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী একমাত্র পোশাক শিল্প, পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক পোশাক খাত যেখানে কাজ করে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক। এই সেক্টরের শ্রমিকরা রাত দিন কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদিত পন্যের মান বৃদ্ধি করে দক্ষতা ও অধিক উৎপাদনশীলতা বজায় রেখে এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন সময়েও গার্মেন্টস শ্রমিকরা দেশের স্বার্থে মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে কাজ করে গার্মেন্টস সমূহ চালু রেখেছে। বর্তমানে ইউয়েনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারনে দেশে-বিদেশে সর্বত্র দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখিতে শ্রমজীবি মানুষ অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। আমাদের দেশে প্রতিটি প্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারনে শ্রমজীবি মানুষের জীবন-জীবিকা আজ কঠিন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য পন্য ক্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাড়ীভাড়া, যাতায়াত ব্যয় সব কিছুই আকাশ চুমি। অপর দিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ পানির নাম কয়েক দফায় বৃদ্ধির কারনে বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এখন নিদারুন কষ্টে আছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩৯ ধারা মোতাবেক পাঁচ বছর পরপর মজুরী বৃদ্ধির বিধান থাকলেও বর্তমানে দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৪০ (ক) ধারায় বিশেষ পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নতুনভাবে মঞ্জুরি কাঠামো ঘোষনা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে আমরা মনে করি। উল্লেখ্য যে, গার্মেন্টসের উৎপাদন ও রপ্তানি দুটোই বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। কিন্তু শিল্পের উন্নয়নের কোন সুফলই গার্মেন্টস শ্রমিকরা গাছে না।
গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদ এর আহবায়ক ও মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সংগ্রামী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা জনাব মোঃ আলাউদ্দিন মিয়া বলেন যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারনে খাদ্য পন্য ক্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যয়, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, যাতায়াত ভাড়া ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার অবিলম্বে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনের দাবী এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবত বিভিন্ন সংগঠন ও জোটের পক্ষ থেকেও মজুরি বোর্ড গঠনের দাবী করে আসছে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরি দিয়ে জীবন যাপন করা দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বা আইনের ১৪১ ধারা অনুযায়ী জীবনযাপন বাবা, জীবনযাপনের মান, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে বর্তমান সময়ের সাথে সামান্য রেখে ৭০% মূল (বেসিক) মজুরি নির্ধারণ করে নিম্নতম মজুরি ২৪,০০০/- টাকা ঘোষনাসহ ৩টি গ্রেডে নির্ধারন করার দাবী জানাচ্ছি।
গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদ এর সদস্য সচিব রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কস ফেডারেশন এর সংগ্রামী সভাপতি বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী জনাব লাভলী ইয়াসমিন বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী যেই সেক্টরের জন্য মজুরী কমিশন গঠিত হবে, সেই সেক্টরের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের প্রতিনিধিকে মজুরি বোর্ডের সদস্য করার জন্য আমরা অনুরোধ করছি। বর্তমানে শ্রমিকদের মজুরীর সাথে জীবনমানের খরচ এতোই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তা দিয়ে কোন ভাবেই শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহ হয় না। তাই, নিম্নতম মজুরী ঘোষনা বিলম্ব হলে মূল (বেসিক) মজুরীর ৪০% মহার্ঘ্য ভাতা ঘোষনা করার দাবী রাখছি। গার্মেন্টস শ্রমিকগন দেশের মূল অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি অথচ তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নাই, তাদের জন্য নাই কোন প্রণোদনা ব্যবস্থা। অপর দিকে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাড়ীভাড়া ও যাতায়াত ব্যয় এতই বেশী তাদের পক্ষে কোন ভাবেই বহন করা সম্ভব নয় তাই আমরা সকল গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর জোর দাবী জানাচ্ছি।
গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদের ০৬ দফা দাবী গুলো-
১) গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করতে হবে।
২) গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকদের প্রতিনিধি মজুরী বোর্ডের সদস্য করতে হবে।
৩) নিম্নতম মজুরী ২৪ হাজার টাকা (৭০% মূল বেসিক) ঘোষণাসহ ৩টি গ্রেডে নির্ধারন করতে হবে।
৪) প্রতি বছর ১০% বাৎসরিক মজুরী বৃদ্ধি করতে হবে।
৫) নিম্নতম মজুরী ঘোষনায় বিলম্ব হলে মূল বেসিকের ৪০% মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে। ৬) স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সকল গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ০৬ দফা কর্মসুচীতে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস্ শ্রমিক পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সংগ্রামী সভাপতি জনাব জাহাদারা বেগম, পূর্ণ আহবায়ক ও বাংলাদেশী গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন এর সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক জনাব মোরশেদ আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশন এর সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক জনাব/পুরিয়া আক্তার, যুগ্ম সদস্য সচিব ও সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশন এর সংগ্রামী সাধারন সম্পাদক জনাব মোঃ শহিদুল হাসান নয়ন, যুগ্ম সদস্য সচিব ও মাদার ল্যান্ড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সংগ্রামী সভাপতি জনাব সালেহা ইসলাম শান্তনা, কেন্দ্রীয় সদস্য ও আলোকিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সংগ্রামী সভাপতি জনাব বাপ্পি দেব বর্মন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন এর সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি আজার, সদস্য ও মাদার ল্যান্ড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সংগ্রামী সাধারন সম্পাদক জনাব মোঃ আল আমিন, সদস্য ও আলোকিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সংগ্রামী সহ-সভাপতি জনাব শ্যাম দুলাল, সদস্য ও মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সংগ্রামী সাধারন সম্পাদক, সদস্য ও রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সপ্তমী সাধারণ সম্পাদক জনাব মাসুদ রানা, সদস্য ও সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশন এর কার্যকরি সভাপতি আখি, ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশন এর সহ-সভাপতি জনাব মাহবুব আলম আকন, সদস্য ও গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন এর সংগ্রামী সভাপতি জনাব মোঃ শাহ আলমসহ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply