বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

হবিগঞ্জে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা সমাজ অভিভাবক মহলে উদ্বেগ, তরুণ-তরুণীদের অভিমান হতাশা আর অভাবে ঝরছে তাজাপ্রাণ

লিটন পাঠান
  • আপডেট : রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫
লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলায় আত্মহত্যার ঘটনা যেন এক অদৃশ্য মহামারির মতো বাড়ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে জেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক কিশোর-কিশোরী ও যুবকের লাশ উদ্ধার হওয়ায় জনমনে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারও মৃত্যু ঘটছে অভিমানে, কারও আবার দারিদ্র্য ও হতাশায়। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরণের প্রবণতা সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত (৪-অক্টোবর) লাখাই উপজেলায় মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী তাকিয়া খাতুন পিতার সাথে অভিমানে ইঁদুর মারার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিলেও বাঁচানো যায়নি। বয়সে যে মেয়েটি এখনও স্কুলের মাঠে খেলার কথা, সামান্য অভিমানে তার জীবনের ইতি টানা একটি ভয়াবহ সামাজিক বার্তা দিচ্ছে। নবীগঞ্জে টানা দুদিনে দুটি মরদেহ উদ্ধার হয়। প্রথমে ভাস্কর ভট্টাচার্য নামে এক যুবককে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরদিনই রাহেল মিয়া নামের আরেক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, হতাশা ও বেকারত্বই এসব ঘটনার পেছনে বড় কারণ।
দীর্ঘদিন ধরে কাজের অভাবে হতাশাগ্রস্থ ছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এর আগে মাধবপুরে ঘটে আরও করুণ যোগমায়া দাস নামের এক (মা) অভাব অনটনের চাপে নিজের প্রতিবন্ধী ছেলে পলাশকে নিয়ে একসঙ্গে বিষপান করেন। একটি পরিবার একই সঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার এমন ঘটনা পুরো এলাকা স্তস্তিত করে দেয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব মৃত্যুর পেছনে মূলত সামাজিক চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, হতাশা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীনতাই কাজ করছে। হবিগঞ্জ জেলায় আত্মহত্যার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট গবেষণা না হলেও ঘটনাগুলোর প্রকৃতি বলছে, মানুষ মানসিকভাবে ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের আত্মহত্যা পরিবারগুলোকে ভাবাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশু কিশোরা খুব দ্রুত আবেগে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তাদের হতাশা, অভিমান কিংবা মানসিক অস্থিরতাকে পরিবার অবহেলা করলে তার মাশুল হয় ভয়াবহ।
অন্যদিকে, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক অনটনের কারণে যুবসমাজ ও চরম হতাশায় ভুগছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক সহায়তা ও কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরি না হলে এ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিটি পরিবারকে সস্তানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা, মানসিক সমর্থন দেওয়া ও সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাউন্সিলিং কার্যক্রম চালু করা জরুরি। হবিগঞ্জে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা সমাজে এক অশনি সংকেত দিচ্ছে। এটি শুধু পারিবারিক নয়, সামাজিক সমস্যাও। এখনই প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা না নিলে সামনে এ সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS