সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন

তরুণরাই দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত পুনর্গঠন করবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশের তরুণরাই শেষ পর্যন্ত জাতীয় রাজনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে সাজাবে। এর মাধ্যমে তারা দেশকে অতীতের বিভাজন থেকে সরিয়ে আরো গঠনমূলক ও জ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।

শুক্রবার ‘বেঙ্গল ডেল্টা কনফারেন্স ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. মো. তৌহিদ হোসেন এ কথা বলেন।

সম্মেলনে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের রাজনীতি, অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘তারা (তরুণরা) হয়তো চলার পথে ভুল করবে, কিন্তু সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে তারা একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।’

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের দৃঢ়তা ও সাহস না থাকলে আজ আমরা যে পরিবর্তন দেখছি, তা সম্ভব হতো না।’

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে অতীতের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ফিরে যেতে দেবে না।

বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে তৌহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ভূ-রাজনীতি পুরোপুরি বদলে দিচ্ছে। এগুলো হলো- ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় গণহত্যা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে পশ্চিমা জনমত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি ইহুদি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা বেড়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক গড়ে উঠলেও এখন তাতে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি ভাবা ঠিক হবে না যে সবকিছু স্থায়ীভাবে বদলে গেছে। ভারত, চীন ও রাশিয়ার নতুন জোট বা সম্পর্কের কথা থাকলেও ‘মূল ভূ-রাজনৈতিক ভিত্তি আগের মতোই আছে।’

উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ২১ শতক নিশ্চিতভাবেই একটি ‘এশীয় শতক’ হবে। এরপর ২২ শতকে আফ্রিকার উত্থান ঘটতে পারে, যদি তারা জনসংখ্যার সুবিধা কাজে লাগাতে পারে এবং নিজের সম্পদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়।

তৌহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে চলা রোহিঙ্গা সংকট এখন একটি জাতীয় সমস্যা থেকে আঞ্চলিক হুমকিতে রূপ নিচ্ছে।

তিনি মনে করিয়ে দেন, প্রায় দশ লাখ তরুণ রোহিঙ্গা, যাদের অনেকেই এখন কৈশোর বা বিশের কোঠায়, তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য শিবিরে আটকে রাখা যাবে না।

তিনি আবারো সতর্ক করে বলেন, ‘এটা ভাবা বোকামি যে তারা চিরকাল একটি আশাহীন জীবন মেনে নেবে। এই সংকটের সমাধান না হলে তা বাংলাদেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে এবং এটি একটি গুরুতর আঞ্চলিক ও সম্ভবত বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত হবে।’

দেশের অভ্যন্তরীণ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উপদেষ্টা শিক্ষা সংস্কারের ওপর জোর দেন এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘শিক্ষাগত বর্ণবৈষম্য’ বলে সমালোচনা করেন।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে একটি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণি বিশ্বমানের শিক্ষা পাচ্ছে, সেখানে বেশিরভাগ শিশু, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিশুরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেও ঠিকমতো বাংলা পড়তে পারে না, ইংরেজি তো দূরের কথা। এমন বৈষম্য জাতীয় অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে, বিশেষ করে তার নিজের বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গণহারে শিক্ষার্থী ভর্তির কেন্দ্র না হয়ে প্রকৃত গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার আহ্বান জানান।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হলেও বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে শিক্ষার মান খুব ভালো হওয়া জরুরি।

উপদেষ্টা বলেন, রাজনীতি নিজের জন্য নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরি করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে তাদের অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে না হয়।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। দলগুলো ক্ষমতা চাইতে পারে, তবে ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে প্রতিষ্ঠান গড়ার, জ্ঞানের প্রসার এবং আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার স্বার্থে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ার সাবেক শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ড. মাজলি বিন মালিক, নেপালের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ড. দীপক গেওয়ালি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, দ্য ওয়্যার-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারাদারাজান এবং ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

উদ্বোধনী বক্তব্য দেন লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুশতাক খান।

ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স (দায়রা) আয়োজিত ‘বেঙ্গল ডেল্টা কনফারেন্স ২০২৫’-এ জলবায়ু পরিবর্তন, ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়েছেন। এই সম্মেলনে সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি গঠনে তরুণদের ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

-বাসস

Please Share This Post in Your Social Media

Comments are closed.

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS