টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরশুরাম উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিন স্থানে ভেঙে অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পরশুরামের শালধর এলাকায় মুহুরী নদীর বাঁধ, বিকেল ৪টার দিকে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর এলাকায় কহুয়া নদীর বাঁধ, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগরের বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩ ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গত মাসে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরী নদীর বাঁধে একাধিক স্থানে ভেঙে অন্তত ৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার পর ভাঙনকবলিত স্থানগুলো নামমাত্র মেরামত করায় আবারও ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেছেন, টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী ও কহুয়া নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পরশুরামের শালধরে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে। বিকেল ৪টার দিকে কহুয়া নদীর পানি বেড়ে টেটেশ্বরে আরেকটি বাঁধ ভেঙে যায়।
চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। এক মাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে ভাঙন এলাকায় দেখা যায়নি। আজ সকাল ১১টার দিকে শালধরে বাঁধ ভেঙে আমার ইউনিয়নের মালিপাথর,পাগলিরকুল, দক্ষিণ শালধর গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, বিকেল ৪টার পর সাতকুচিয়া ও টেটেশ্বর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। ইতোমধ্যে সাতকুচিয়া, বাঘমারা, টেটেশ্বর ও চাড়িগ্রাম প্লাবিত হওয়ায় অন্তত ৩৬৫ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তথ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
মির্জানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনীয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১০০ পরিবারের জন্য শুকনো খাবার দিয়েছেন। আমরাও ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেছেন, টানা বর্ষণে পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনটি ইউনিয়নে ভাঙনের খবর পেয়েছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফেনীর উচ্চ পর্যবেক্ষক সালেহ আহাম্মদ বলেছেন, ফেনীতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিনেও ফেনীতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply