শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:২৭ অপরাহ্ন

জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১০ আমল

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮৯ Time View

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের কিছু বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, এটা তো লেলিহান অগ্নি, যা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে। (সুরা মাআরিজ, আয়াত : ১৫-১৬)

অন্য আয়াতে এসেছে, তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের চামড়া ও পেটের ভেতর যা আছে তা বিগলিত করা হবে। (সুরা হজ, আয়াত : ১৯-২০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এক হাজার বছর জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়েছে। ফলে তার আগুন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। অতঃপর পুনরায় এক হাজার বছর উত্তাপ দেওয়ার ফলে এটি সাদা রং গ্রহণ করেছে। তারপর আরো এক হাজার বছর উত্তাপ দেওয়ার ফলে এর আগুন কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং জাহান্নাম এখন সম্পূণরূপে গাঢ় কালো তমসাচ্ছন্ন। (তিরমিজি শরিফ)

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, জাহান্নামের মধ্যে সেই ব্যক্তির শাস্তি সবচেয়ে হালকা হবে, যার পাদুকাদ্বয় ও জুতার ফিতা হবে আগুনের তৈরি। এর ফলে হাঁড়ির মতো তার মস্তিষ্ক ফুটতে থাকবে। সে মনে করবে, তার শাস্তিই সর্বাপেক্ষা কঠিন। অথচ তার আজাবই সর্বাপেক্ষা হালকা। (বুখারি ও মুসলিম)

জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ কখনো প্রশমিত হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা (আজাব) আস্বাদন করো, আমি তো তোমাদের শাস্তি কেবল বৃদ্ধিই করব।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৩০)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যখনই তা (জাহান্নামের আগুন) স্তিমিত হবে তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯৭)

জাহান্নাম হলো পরলোকের এমন একটি বিশাল এলাকা, যেখানে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারিত আছে। সেগুলোকে প্রধানত সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

১. নার তথা আগুন। ২. জাহান্নাম তথা আগুনের গর্ত। ৩. জাহিম তথা প্রচণ্ড উত্তপ্ত আগুন। ৪. সায়ির তথা প্রজ্বলিত শিখা। ৫. সাকার তথা ঝলসানো আগুন। ৬. হুতামাহ তথা পিষ্টকারী। ৭. হাবিয়া তথা অতল গহ্বর।

নিম্নে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশ আমল বর্ণনা করা হলো-

১. আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্ভ্রম রক্ষা করে, সে আল্লাহর কাছে এ অধিকার পায় যে তিনি তাকে দোজখ থেকে মুক্ত করে দেন। (মুসনাদে আহমদ, সহিহুল জামে, হাদিস : ৬২৪০)

২. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল হামদুলিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল কিংবা ভালো কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ওই দিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা যাপন করল যে সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২২২০)

৩. রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ যদি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল্লাহু আকবার’ ৩৩ বার পাঠ করে, এরপর একবার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ পাঠ করে, ওই ব্যক্তির সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনার সমতুল্য হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২৩৯)

৪. যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে। (নাসাঈ : ৫/৩৩৯; সিলসিলাহ সহিহাহ : ৯৭২)

৫. রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, যদিও খেজুরের এক টুকরো সদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এর সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভালো কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪১৩)

৬. হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘কোনো ব্যক্তি যদি জান্নাতের জন্য আল্লাহর কাছে তিনবার প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোনো ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহর কাছে বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৭২)

৭. রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধারাবাহিকভাবে জোহরের আগে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ : ১১৬০, আবু দাউদ, হাদিস : ১২৬৯)

৮. আবু বকর ইবনে শায়বা, আবু কুরায়ব ও ইসহাক ইবনে ইবরাহিম (রহ.) আবু বকর ইবনে উমর ইবনে রুয়াইবা (রহ.) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের আগে অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত আদায় করে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তখন বসরার এক ব্যক্তি তাঁকে বলেন, আপনি কি এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শুনেছেন? তিনি বলেন হ্যাঁ। তখন ওই ব্যক্তি বলল, আমি এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজ কানে তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শুনেছি এবং আমার হৃদয়ে তা গেঁথে রেখেছি। (মুসলিম, হাদিস : ১৩১১)

৯. রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে তার ওপর জাহান্নাম হারাম।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৪৬৮২)

১০. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম?

যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী (তার জন্য জাহান্নাম হারাম)।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৮)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS