শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা রোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন: সবুজ আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩
  • ২২৬ Time View


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম। দেশ স্বাধীনের পর থেকে সমাজের স্বার্থান্বেষী মানুষ আর সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ১৩০ টির অধিক পাহাড়। আধুনিক সভ্যতার আধুনিকায়নে চট্টগ্রামের পরিবেশ যেন এক গুমোট বাধা নৈরাজ্যের স্বাক্ষী। ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম উন্নয়নের মহাসড়কে থাকলেও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে তা এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এজন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।

আজ ১৩ এপ্রিল সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে শহরের বদ্দারহাট মোড়ের কাশবন রেস্টুরেন্টে” চট্টগ্রামের পাহাড় কর্তন রোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। এ সময় বক্তারা সকলেই সরকারের সদিচ্ছার অভাব অনুপস্থিত বলে মন্তব্য করেন।

আলোচনায় সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ ডক্টর মোহাম্মদ সানাউল্লাহ সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার। প্রধান আলোচন হিসেবে বক্তব্য রাখেন সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রানিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোর্শেদ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ূন কবির, সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মোঃ রেহায়েত করিম বাবুল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম।

প্রধান অতিথি বলেন, চট্টগ্রামে  স্বাধীনতার পর ২১০টির অধিক পাহাড় ছিল, যার ৬৫ ভাগ  বিলুপ্ত হয়েছে৷ চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা না থাকায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ সিটি কর্পোরেশন যার যার মত করে বিভিন্ন সময়ে অভিযান  শুরু করে জরিমানার প্রক্রিয়া চালিয়ে আসলেও ফলশ্রুতিতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে” পাহাড়কে পৃথিবীর পেরেক স্বরূপ স্থাপন করা হয়েছে”।

অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে দেখা দিচ্ছে ভূমিকম্প ও পাহাড় ধস। মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করার পাশাপাশি মানুষ এবং জীব-বৈচিত্র্যের সুপেয় পানির আধার সংরক্ষণে পাহাড় প্রধান ভূমিকা রাখে। যেভাবে পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে তাতে চট্টগ্রাম মহানগরী আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হবে। শহর সম্প্রসারণের ফলে উঁচু উঁচু দালান কোটা নির্মাণ করা হচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উত্তাপ পরিশোধন করার বিকল্প কোন পদ্ধতি না  থাকায় নগরীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।  পাহাড় কেটে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন করে মানুষ আর্থিকভাবে যতটুকু লাভবান হচ্ছে বাস্তবে প্রাকৃতিক ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে।

প্রধান আলোচক বলেন,চট্টগ্রামে ২০০৭ সালে পাহাড় ধ্বসে ১২৯ জন মারা যাওয়ার পর শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটির কথা বলা হয় কিন্তু বাস্তবে বড় কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ইতোমধ্যে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন চট্টগ্রামের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। তার মধ্যে সবুজ আন্দোলন অন্যতম। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে  পাহাড় রক্ষায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ কথা বললেও প্রশাসন অনেকটা ভূমি দস্যুদের  পক্ষে অবস্থান করে।

উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ে নির্মিত স্থাপনাসমূহ গুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও প্রায় এক যুগে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাহাড় কেটে সরকারি হাসপাতাল, সড়ক, ছোট বড় আবাসন এলাকা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে। যেখানে খোদ সরকারের অধিদপ্তর গুলো পাহাড় কেটে স্থাপন করা হয়েছে তাহলে ভূমি দস্যুরা পাহাড় কাটলে দোষ কোথায়, এমন কথা অনেককে বলতে শোনা যায়। নিশ্চুপ পরিবেশ অধিদপ্তর, নিশ্চুপ প্রশাসন তাই কেঁদে মরে অবুঝ পাহাড়।

চট্টগ্রামের পাহাড় কর্তন রোধে অন্যান্য বক্তারা বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর, ভূমি মন্ত্রণালয় ও বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের যৌথ কমিটি প্রণয়ন এবং সকল পরিবেশবাদী সংগঠনকে সাথে নিয়ে এসটেক হোল্ডার বডি তৈরি করা।বর্তমান সময়ে যে পাহাড়গুলো আছে তার আয়তন নির্ধারণ করা অর্থাৎ সীমানা পিলার এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা। পাহাড়ে বসবাসকারী সকল আদিবাসীদেরকে সমতল ভূমিতে স্থানান্তর করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি সকল প্রকল্প ও স্থাপনা স্থানান্তর করে শহর থেকে দূরে পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা।

২৫ ভাগ বনায়ন নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা এক্ষেত্রে পাহাড়ে নতুন করে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

পাহাড় কর্তনকারীদের সর্বোচ্চ সাজার ব্যবস্থা করতে উচ্চ আদালত থেকে আইন পাস করতে হবে।পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা যাচাই এবং পাহাড়ে উঠান নামার ক্ষেত্রে সঠিক প্রণয়ন করতে হবে।সর্বস্তরে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সরকারিভাবে জনসচেতনতা তৈরীর জন্য নিয়মিত সভা সেমিনার ও তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য সচিব স্থপতি শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ অর্থ সম্পাদক জেসমিন আক্তার জেসি,সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন,সহ  সাংগঠনিক সম্পাদক সাবিহা জাহান রকসি,আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS