মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চলতি মাসে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ১০৩টি বাড়ির ২৫৯টি বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে আহমদিয়া সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে যা মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ মিলনায়তনে ‘পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হামলার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার, জবাবদিহিতা ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী তামান্না হক রিতী। তিনি বলেন, গত ৩ মার্চ পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালান জলসা বন্ধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুনে পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে একজন তরুণ ও বিক্ষোভকারীদের আঘাতে আরও এক তরুণ নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, তথ্যানুসন্ধান ও বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনায় মানবাধিকার ফোরামের কাছে এটা স্পষ্ট যে, এটি পূর্বপরিকল্পিত এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সংগঠিত। যা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এ সময় টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায় যে অনুষ্ঠান করবে তা আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে অগ্রিম জানানো হয়েছিল। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই দেশবাসীর মনে উঠছে। যৌক্তিকভাবে এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা আমরা চাই। এই বিষয়টি আমাদেরকে মোটা দাগে উদ্বিগ্ন করে। আমাদের সংবিধানের যে মূল নীতি আছে তার সঙ্গে এই ঘটনা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। অসাম্প্রদায়িক এবং সকল নাগরিকের সম অধিকারের যে স্বপ্ন দেখেছিলা তা আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ধারণ করা আছে। এর মাধ্যমে সাংবিধানিক চেতনা এবং স্বাধীনতা চেতনাকে পদদলিত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের বৃহৎ দুটি দল অনেক আগে থেকেই এ ধরনের ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করায় আমরা এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি বারবার দেখছি। এসব ঘটনা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করায় দলগুলো মনে করছে এটা সমাধান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এ ধরনের ঘটনা আরো বড় সমস্যায় পরিণত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফোরামের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে আহমদিয়া জামাত ইসলামের ঢাকাস্থ অফিস পরিদর্শন করে তাদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মানবাধিকার ফোরাম ৫ দফা দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো- এ হামলার সাথে জড়িতদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে চিহ্নিত করে দ্রুততার সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিচার নিশ্চিত করা; হামলা হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও জলসা আয়োজনের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করায় স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অনলাইন ও অফলাইনে যারা ঘৃনা ছড়াচ্ছে এবং এ সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় প্ররোচিত করেছে, সেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কি ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয় হয়েছে তা জনগণকে জানানো। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দ্রুততার সাথে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পূর্বের সকল হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জনসম্মুখে প্রকাশ করা। একইসাথে দ্রুততার সাথে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্টেপ টি ওয়ার্ডসের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, আইন এ সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান, ব্লাস্ট এর অনারারী নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন প্রমূখ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS