নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা দেশের নৃত্যশিল্পীদের একটি ঐক্যবদ্ধ সংগঠন। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই সংগঠনের জেলা কমিটি সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এখানে উল্লেখ করতে চাই, প্রতিবছর শিল্পকলার সকল শাখায় বিশিষ্ট গুণী শিল্পীদের একুশের এবং স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সম্মানিত করা হয়; দেয়া হয় তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি। গভীর হতাশার সঙ্গে উল্লেখ করতে হচ্ছে, নৃত্যকলার বেলায় পদক প্রদানে ধারাবাহিকতা রক্ষা হচ্ছে না। চার বছরের বিরতি দিয়েও একুশের পদক প্রদানের নজীর আছে। স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়েছে মাত্র দুইবার। সংস্কৃতি বান্ধব বর্তমান সরকারের কাছ থেকে নৃত্যশিল্প এবং নৃত্যশিল্পীরা প্রতিনিয়ত যে সহযোগিতা ও প্রশংসনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন তার জন্য তাঁরা আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে নৃত্যশিল্পী, নৃত্যজন, নৃত্যপ্রেমীরা মর্মাহত।
ষোলকলার শ্রেষ্ঠকলা হিসেবে আখ্যায়িত নৃত্যকলা, নিজস্ব স্বকীয়তায় সমৃদ্ধ: ললিতকলার নান্দনিক শাখার ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত এক প্রাচীনতম বিদ্যা। কঠোর পরিশ্রম, সাধনা ও নিষ্ঠা ছাড়া এই বিদ্যা অর্জন অসম্ভব। প্রাচীনতম শিল্পটি বাংলাদেশের শিল্পীরা যে যার আঙিনায় থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে চর্চায় নিবেদিত প্রাণ। তাঁরা নৃত্যের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্যকে তুলে ধরছেন, উপস্থিত করছেন বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল দীর্ঘ সংগ্রামের কাহিনি। এমনকি করোনায় ঘরবন্দী বিশ্ব যখন ছবির, তখনও বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পীরা এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা অন্তর্জালের মাধ্যমে তাদের শিল্পচর্চাকে সচল রেখেছেন। দেশবাসীকে হতাশামুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন।
একথা অনস্বীকার্য যে, নৃত্যের ভাষা আন্তর্জাতিক। এদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, গৌরবের ইতিহাস বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিতে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে নৃত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তাছাড়া নানাবিধ সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং রক্ষণশীল মনোভাবকে সবচেয়ে বেশি মোকাবেলা করতে হয় নৃত্যশিল্পকে। বিরুদ্ধ স্রোত উচিয়ে প্রতিনিয়ত বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নৃত্যশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ধৈর্য্যের সাথে লড়াই করে চলেছেন নৃত্যশিল্পীরা। অথচ জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্তি থেকে যখন নৃত্যশিল্প বঞ্চিত হয়, তখন জাতির কাছে একটি বার্তাই পৌঁছায়, নৃত্যশিল্প চর্চায়, বিকাশে, গবেষণায় নৃত্যশিল্পীদের কোনো অবদান নেই এবং নৃত্যশিল্প একটি গুরুত্বহীন শিল্প মাধ্যম। এই ধরনের নেতিবাচক ভাবনা নৃত্যশিল্পীদের আত্মত্মমর্যাদায় আঘাত হানছে, তাদের হতাশ করছে।
সুতরাং উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার আহ্বান, কোনো রাষ্ট্রীয় পদক প্রদানের ক্ষেত্রে যেন নৃত্যশিল্পকে গুরুত্বসহকারে সহৃদয় বিবেচনার মধ্যে রাখা হয়। এই সহৃদয়তা নৃত্যশিল্পীদের কৃতজ্ঞ ও প্রাণিত করবে এবং তা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম হিসেবেও মূল্যায়িত হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply