মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দেশীয় শিল্পী দিয়ে বিজ্ঞাপন বানাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দেশীয় শিল্পীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানোর বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি বিজ্ঞাপন বানিয়ে যে বিভিন্ন দেশে প্রচার করে, তা বন্ধে কাজ করছে সরকার। আমরা এ নিয়ে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসবো। পাকিস্তানে কিন্তু তারা এমনটি করতে পারে না। আরও কয়েকটি দেশেও তারা পারে না। কোম্পানিগুলোকে ওই দেশের শিল্পীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করতে হয়। তাহলে আমাদের দেশে কেন নয়?’

রোববার (৫ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলের তথ্যভবন হলে টিভি চ্যানেলের বার্তা প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বিকাশে আওয়ামী লীগ সরকার উদার দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তার হাত দিয়ে প্রথমে ইটিভি, তারপর এটিএন বাংলা ও চ্যানেল আইয়ের যাত্রার শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০টি টেলিভিশন চ্যানেল আত্মপ্রকাশ করে। তখন থেকে আমার জানা মতে ৩৬টি প্রাইভেট টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে। আরও বেশ কয়েকটি খুব শিগগিরই সম্প্রচারে আসবে। অর্থাৎ প্রাইভেট টেলিভিশনের সংখ্যা চল্লিশে গিয়ে দাঁড়াবে।’

তথ্যমন্ত্রী আশা জানিয়ে বলেন, ‘এসব টেলিভিশন চ্যানেলে নতুন গ্র্যাজুয়েট যারা হচ্ছেন, তাদের কর্মক্ষেত্রের একটি বড় সুযোগ হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট থেকে পাস করেন, তাদের একটি বড় অংশ এসব চ্যানেলে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা অনেক মেধাবী, কষ্ট করে, ছোটাছুটি করে কাজ করেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রাইভেট টেলিভিশনের কর্মীদের ঘরে বসে অনলাইন দেখে রিপোর্টিং করার সুযোগ নেই। যদিও অনেক ক্ষেত্রে অনেকে করে এখন। কিংবা টেলিফোনে সংবাদ সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে কাগজে জমা দেয়া, এমন করারও সুযোগ প্রাইভেট টেলিভিশনে নেই। কর্মীদের স্পটে যেতে হয়, ফুটেজ নিতে হয়। অনেক ছোটাছুটি করে, কষ্ট করে কর্মীরা।’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশে গেল ১৪ বছরে প্রাইভেট টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা বা অনলাইন বলুন, সবকিছুর বিকাশ হয়েছে। দৈনিক কাগজের সংখ্যা সাড়ে চারশ’ থেকে সাড়ে ১২০০। অনলাইন নিউজ পোর্টাল হাতে গোনা কয়েকটি ছিল, এখন তা কত হাজার আমিও জানি না। সেটা একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।’

দেশের উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে। অর্থনীতির চাকা শুধু সচল আছে, তা-ই না, আমাদের জিডিপির গ্রোথও বাড়ছে। ২০০৯ সালে আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার, এখন তা পৌনে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জিডিপির আকার বেড়েছে পাঁচ গুণ বা তারও বেশি। মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলার, এখন দুই হাজার ৮৮৪ ডলার, যা ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। সব সূচকে পাকিস্তানকে আরও সাত-আট বছর আগে ছাড়িয়েছি।’

ইকোনোমিস্টের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল ইকনোমিস্ট বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটির প্রশংসা করে রিপোর্ট করেছে। সেই রিপোর্টটি কিন্তু আজ সব কাগজে আবার নেই। এটি কয়টি টেলিভিশনে আছে বা থাকবে, সেটিও একটি প্রশ্ন।’

বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্টদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য যতটুকু করা সম্ভব আমি চেষ্টা করেছি। আমাদের দেশের টেলিভিশনের কোনো সিরিয়াল ছিল না, এই সিরিয়াল আগে নেয়ার জন্য ক্যাবল অপারেটরদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হতো। আপনারাই ভুক্তভোগী ছিলেন। টেলিভিশনের সিরিয়ালটা শুরুতেই আমরা ঠিক করে দিয়েছি।’

‘বিদেশি টেলিভিশনে আমাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন চলে যেতো, সেটি আমরা বন্ধ করেছি। আমাদের শিল্পীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য নতুন বিধান চালু করেছি’, যোগ করেন তিনি।

বিদেশি ধারাবাহিক নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি সিরিয়াল থাকবে, এটি বন্ধের পক্ষপাতি আমি না। কিন্তু কোনো টেলিভিশন শুধু বিদেশি সিরিয়ালের ওপর নির্ভর করেই চলবে, সেটি সমীচীন না। তাহলে আমাদের শিল্পীরা অভিনয় কখন করবে, মাদের নির্মাতারা কী বানাবে! আর আমি কেন চাইনিজ, কোরিয়ান সিরিয়াল দেখবো। সেসবের সঙ্গে আমাদের সামাজিক কী মিল আছে’, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে নিজস্ব সিরিয়াল প্রচারের প্রশংসা করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখন কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল নিজেদের মতো করে সিরিয়াল তৈরি করছে। এতে আমাদের দর্শক বাড়ছে। এছাড়া পাশের দেশ থেকে বিজ্ঞাপন বানিয়ে আনাও ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেটিরও লাগাম টেনে ধরা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে টিভি চ্যানেলের বার্তা প্রধানদের সহযোগিতা চেয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। কয়েকটি বাদে আপনাদের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সম্প্রচারে এসেছে। দেশ পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকবে। কিন্তু সাফল্যগুলো তুলে ধরতে হবে। কারণ কোনো সরকার পৃথিবীতে শতভাগ নির্ভুল কাজ করতে পারে না। অতীতে পারেনি, বর্তমানেও পারবে না।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS