শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ গুলিস্তানের খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্সে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট হতাহতদের পাশে নৌ উপদেষ্টা, লঞ্চ দুর্ঘটনায় অনুদান ঘোষণা স্মৃতিসৌধে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জামায়াত দেশে শান্তি চায়নি কখনো : মোমিন মেহেদী নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের এমপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের উদ্যোগে পূর্বাচল ৩শ ফুট সড়ক পরিচ্ছন্ন করেছেন নেতাকর্মীরা ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন–২০২৫-এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত ভালুকায় দীপু দাস হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ময়মনসিংহে ভোটের গাড়ির মনোজ্ঞ পরিবেশনা চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪

চাকরিপ্রার্থীকে কামড়ায় পুলিশ, এ কোন পশ্চিমবঙ্গ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৫১ Time View

বিক্ষোভ থামাতে পুলিশের লাঠি, গ্যাস, গুলি সবই আগে দেখা গেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবার দেখা গেল, বিক্ষোভকারীকে কামড়াচ্ছে পুলিশ। 

ডয়চে ভেলে বলছে, তারা চাকরি ন্যায্য দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন। চাকরির পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পাননি। চাকরি দূরস্থান, তারা পেলেন পুলিশের লাঠি, ঘুষি ও কামড়। গত বুধবার কলকাতায় এই ঘটনা ঘটেছে। টেট বিক্ষোভকারী অরুণিমা পালকে কামড়ে দিয়েছেন এক নারী পুলিশ কনস্টেবল।

এখানেই শেষ নয়। এরপর পুলিশের কামড় খাওয়া অরুণিমাকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।  পরে আদালত অবশ্য তাকে জামিন দিয়েছে। সেই সঙ্গে আদালত টেট প্রার্থীদের ৪০ দিন বিক্ষোভ দেখানোর অনুমতিও দিয়েছে।

অন্যদিকে যে পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মানুষকে কামড়ে দেয়ার অভিযোগ, যার দৃশ্য সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে, তিনি  ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। পুলিশের দাবি, অরুণিমাও ওই কনস্টেবলকে কামড়েছেন। 

তারপরে সামনে এসেছে পুলিশের আরো সংবেদনহীন চেহারা। টিভি৯-এর ভিডিও রিপোর্টে দেখা গেছে, হেয়ার স্ট্রিট থানায়  এক পুলিশ কর্মী অরুণিমাকে বলছেন, ‘‘আপনারা ওখানে গেছিলেন। ধরা পড়েছেন। আপনি মরলে তার দায়িত্ব আমরা নিয়ে নেবো।’’

টেট মানে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট। এই পরীক্ষায় পাস করা সত্ত্বেও প্রার্থীরা চাকরি পাননি। তাদের অভিযোগ, পয়সা দিয়ে অযোগ্যরা চাকরি পেয়েছেন, অথচ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা পাননি। তাই তারা আন্দোলন করছেন। কিন্তু রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে গেলে জুটছে পুলিশের লাঠি, ঘুষি, কামড়।

স্কুল ও কলেজপাঠ্য সব বইতে বলা হয়, গণতন্ত্রে বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার সকলের রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাদের কাছ থেকে এই অধিকারও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। চাকরি দেয়া হচ্ছে না। বিক্ষোভ দেখাতে দেয়া হচ্ছে না, জেলে আটকে রাখা হচ্ছে, তাহলে তারা যাবে কোথায়? 

অরুণিমাকে যখন পুলিশ ভ্য়ানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘পুলিশ আমাকে কামড়েছে।’’ কামড়ের দাগ দেখিয়ে অরুণিমা বলেন, ‘‘পুলিশ কি মানুষখেকো?’’

অরুণিমার স্বামীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যাকে কামড়ানো হলো, তাকে চিকিৎসা না করে জেলে পুরে দেয়া হলো আর যে কামড়ালো সে হাসপাতালে ভর্তি হলো? এ তো বিরলতম ঘটনা!’’

অরুণিমার মা বলেছেন, ‘‘পুলিশ অরুণিমাকে বলছে, মৃত্যুর পর দেখবে। আমি মা হয়ে তা শুনছি। এটা কি কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে?’’ অরুণিমার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে বলেছে, ‘‘প্রতিবাদ করলে কামড়ানো হবে, প্রতিবাদ করলে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, প্রতিবাদ করলে এরকম বিচারই হবে!’’

কিন্তু পুলিশ সেসব কথায় কান দিচ্ছে না। তারা দাবি করেছে, অরুণিমাই প্রথমে কনস্টেবলকে কামড়ায়। তাদের দাবি- এর তথ্যপ্রমাণও আছে। ইভা থাপা নামের এক পুলিশকর্মী তখন রেগে গিয়ে অরুণিমাকে কামড়ান। ইভার মেডিক্য়াল রিপোর্টে হিউম্যান বাইটের উল্লেখ আছে। কিন্তু টিভি-র ভিডিও অন্য কথা বলছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘এটা কি আইনের রাজত্ব? যারা অপরাধ করলো, তারা বহাল তবিয়তে আছেন, যিনি আক্রান্ত হলেন, তাকে জেলে পোরা হলো।’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘পশুর প্রবৃত্তি পুলিশের মধ্যে চলে আসছে। সেজন্য ওরা কামড়াকামড়ি করছে।’’

রাজ্য়ের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়। তাই আমি কিছু বলবো না। কামড়ালেও তো পুলিশ কেস হবে।’’

অন্য প্রতিক্রিয়া

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘পুরো ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সরকার এখন হয় কাজ করছে না বা করতে পারছে পারছে না। তাদের আচরণে একটা অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট।’’ শুভাশিসের বক্তব্য, ‘‘বিক্ষোভকারীরা  নিরস্ত্র ছিল। তারা একটা ঢিলও মারেনি।,তাদের সঙ্গে পুলিশ এরকম ব্যবহার করার পরেও কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে সরকারের সদিচ্ছার অভাব ফুটে উঠেছে।’’ 

লেখক ও সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘পুলিশ দলদাসে পরিণত হলে এরকম ঘটনা ঘটে। সারা দেশেই ঘটছে। পশ্চিমবঙ্গে খুব বেশি করে হচ্ছে।’’ দীপ্তেন্দ্র মনে করেন, ‘‘পুলিশ হয় এখানে  শাসক দলের নির্দেশে এই কাজ করছে অথবা শাসক দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে করছে। এই সব ঘটনা আমাদের নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পরে পুলিশকর্তাদের এর জবাবদিহি করতে হবে।’’

মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক আশিস গুপ্তও মনে করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ নৈরাজ্যের দিকেই যাচ্ছে।’’ ডয়চে ভেলেকে আশিস বলেছেন, ‘‘পুলিশ আগেও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করেছে, মেরেছে। কিন্তু এখন তারা সব সীমা লঙ্ঘন করছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। আর এরপরেও পুলিশের শাস্তি হয় না। তাই তারা এরকম বা এর থেকেও খারাপ কাজ করতে থাকবে।’’ 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS