শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন

কলেজশিক্ষিকার মৃত্যু, আদালতে স্বামী মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২

শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের (৪৫) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আটক স্বামী মামুন হোসেনকে (২২) ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে মামুনকে আদালতে নেওয়া হয়। কিন্তু ছুটির দিন হওয়ায় বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটে তাকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোসলেম উদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার স্বপন বলেন, ‘মামুন হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি পুলিশ। এ কারণে ৫৪ ধারায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়। সুতরাং তার জামিন পাওয়ার আমরা হকদার। মঙ্গলবার পুনরায় জামিনের জন্য আবেদন করা হবে।’

কোর্ট দারোগা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু খায়রুন নাহারের মামলাটি তদন্ত চলছে, সে কারণে তাকে জামিন দেওয়ার বিরোধিতা করা হয়েছে। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন।’

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ জানান, খায়রুন নাহারের মৃত্যুর ঘটনায় তার চাচাতো ভাই গুরুদাসপুর উপজেলার খামার নাচকৈড় গ্রামের সাবের উদ্দিন বাদী হয়ে একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা করেছেন।

এর আগে রোববার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে। পরে মরদেহ নাটোর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

নাটোর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সামিউল ইসলাম শান্ত জানান, তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল খায়রুন নাহারের ময়নাতদন্ত করে। পরে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘খায়রুন নাহারের মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তারপরও ভিসেরা রিপোর্ট এলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’

রাতেই খায়রুন নাহারের মরদেহ তার বাবার বাড়ি গুরুদাসপুর পৌর সদরের খামার নাচকৈড় মহল্লায় নেওয়া হয়। পরে আবু বকর সিদ্দিকী কওমি মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে নাচকৈড় কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

আগের স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ফেসবুকে মামুন হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় খায়রুন নাহারের। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর কাজি অফিসে গিয়ে তারা গোপনে বিয়ে করেন।

সম্প্রতি বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়। এ অসম বিয়ে মামুনের পরিবার মেনে নিলেও খায়রুন নাহারের পরিবার মেনে নেয়নি। ফলে তারা নাটোর শহরের বলারীপাড়া এলাকায় মোল্লা ম্যানশনের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলেন। রোববার সকালে ওই ফ্ল্যাট থেকে খায়রুন নাহারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

খায়রুন নাহার গুরুদাসপুরের খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। মামুন নাটোর এন এস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর ছেলে।

এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, পুলিশের একাধিক টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সিসিটিভির ফুটেজও পাওয়া গেছে। আটক মামুনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। খায়রুন নাহারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মামুন ব্যবসা করতেন। খায়রুন নাহার তার বড় ছেলে বৃন্তকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা দিতে মামুনের সম্মতি চান। কিন্তু মামুন ওই টাকা দেননি। এনিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে মামুন রাগ করে রাত ২টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরে ভোর ৬টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখেন খায়রুন নাহার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS