রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন

গাজায় আরও ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক বিমান হামলায় অন্তত ৬১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সহায়তা পেতে আসা কমপক্ষে দুজন রয়েছেন। স্থানীয় চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার গাজার উত্তরাঞ্চলের শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এ হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, দক্ষিণ গাজার রাফাহর উত্তরে একটি বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত ত্রাণ লাইনে হামলায় দুই নারী নিহত ও ৩০ জন আহত হন।

জাতিসংঘ জানায়, মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ নিতে গিয়ে অন্তত ৮৭৫ জন নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার।

ইসরায়েলি বাহিনী মঙ্গলবার গাজার উত্তরের ১৬টি এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর জাবালিয়াও রয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক মোআথ আল-খাললুত জানিয়েছেন, “সবাই আতঙ্কে দিশেহারা। কারও কাছে গাড়ি নেই, জ্বালানি নেই, কেউ গাধার গাড়িতে করে, কেউ হেঁটে পালাচ্ছে। তারা জানেও না কোথায় যাবে।”

এদিকে গাজা শহরের একটি শরণার্থী তাঁবুতে চালানো এক হামলায় ছয় জন নিহত হন বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, চার মাসের অবরোধের ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানান, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্ক্রিনিং করা শিশুদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে।

ইউএনআরডব্লিউএ এক বিবৃতিতে গাজার এই অবস্থা “ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা” এবং “মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ” বলে উল্লেখ করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার ব্রাসেলসে এক বৈঠকে গাজায় মানবিক অবস্থা না বদলালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন।

ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কালাস ১০ দফা প্রস্তাব দেন, যার মধ্যে রয়েছে, ইইউ-ইসরায়েল সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিতকরণ, ভিসামুক্ত ভ্রমণ বন্ধ ইত্যাদি।

কালাস বলেন, “এই পদক্ষেপগুলোর উদ্দেশ্য ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো।”

তবে এখনো ইইউ দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যমত না থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সা’আরের সঙ্গে বৈঠকের পর কালাস জানান, কিছু সীমান্ত খুলেছে, কিছু ট্রাক প্রবেশ করেছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কিছু অগ্রগতি আছে—তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

ইইউ কর্মকর্তারা আবারও জিএইচএফ-এর সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করেন।

ইউরোপের কয়েকটি দেশ—যেমন আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও স্পেন—ইসরায়েলের সঙ্গে ইইউ’র সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলেছে।

ইইউ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড চুক্তিভিত্তিক মানবাধিকার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের “ইঙ্গিত” বহন করে।

নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প বলেন, “ইইউ’র ২৭ দেশের সম্মিলিত চাপেই এই নতুন মানবিক চুক্তি সম্ভব হয়েছে। এই ঐক্য বজায় রাখতে চাই।”

আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস বাইর্ন বলেন, “এখনো তেমন কোনো বাস্তব পরিবর্তন দেখা যায়নি। কিছু নামমাত্র পদক্ষেপ দেখা গেলেও গণহত্যা চলছে, খাদ্য ও পানির প্রবেশ অস্বীকার করা হচ্ছে।”

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, “এই চুক্তিই শেষ নয়। যুদ্ধ থামাতে হবে।”

মানবাধিকার সংগঠন ফিডিএইচ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেক্সিস ডেসওয়েফ বলেন, “ইইউ রাশিয়ার ওপর যেমন নিষেধাজ্ঞা দিতে পেরেছে, তেমনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও তা দিতে হবে—এই গণহত্যা থামাতে এবং ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “এটা শুধু রাজনৈতিক কাপুরুষতা নয়। ইউরোপের প্রতিটি নীরবতা, প্রতিটি নিষ্ক্রিয়তা ইসরায়েলের অপরাধে জড়িত থাকার ঝুঁকি বাড়ায়।”

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS