দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সিজারের পর এক প্রসুতি মাতার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকাবাসী রাতে ক্লিনিক ঘেরাও করে। রোগী মারা যাওয়ার পর মেডিকেলে আইসিইউতে ভর্তি করে আমাদের সাথে প্রতারনা করা হয়েছে দাবী মৃতের পরিবারের। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য রাতভোর ঘটনাস্থলেই ছিলো। পরে আপশ হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বীরগঞ্জ পৌর শহরের ঠাকুরগাঁও বাসষ্ট্যান্ডের একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে।
নিহত প্রসুতি মাতার নাম আশা মনি রায় (২০)। তিনি বীরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের হৃদয় রায়ের স্ত্রী।
জানা যায়, সকাল ১১ টার দিকে প্রসব ব্যথা শুরু হলে আশা মনি রায়কে একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এ সময় জানানো হয় নরমাল ডেলিভারী সম্ভব নয়। তাই সিজার করতে হবে। প্রথম সন্তান হওয়ায় পরিবারের লোকজন কোন প্রকার ঝুঁকি নিতে চায়নি। তাই তারা সিজার করতে রাজি হয়। বিকাল ৩ টার সময় ডাঃ ইয়াসমিন ইসলাম সিজার করেন। সিজারের মাধ্যমে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্মদেন আশা মনি রায়। সিজারের পর রোগীর লোকজনদেরকে বলেন জ্ঞান ফিরলেই বেডে দেয়া হবে। পরে সারিরিক অবনতী হলে ক্লিনিক মালিক কর্তৃপক্ষ ও ডাঃ ইয়াসমিন ইসলাম এ্যাম্বুলেন্স যোগে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসাপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে আইসিইউতে নেয়া হয়। রাত ৮ টার দিকে হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যু হয় বলে জানায়। দিমেক হাসাপাতাল সুত্রে জানা যায় প্রচন্ড রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ক্লিনিক ঘেরাও করে রাখে।
মৃত আশা মনি রায়ের শাশুড়ী অনিমা রায় জানায়, ডাঃ ইয়াসমিন ইসলাম নিজেই আমার বৌমাকে মেরে ফেলেছে। বৌমা প্রথম সন্তান সম্ভবা হলে গাইনী ডাক্তার হিসাবে প্রায় ১ বছর ধরে তিনি নিজেই চিকিৎসা করে আসছিলো। ডাঃ ইয়াসমিন নিজেই সিজার করে সকল কাজ সমাপ্ত না করে দ্রুত অন্য ক্লিনিকে টাকা কামাতে চলে যায়।
আশা মনির শশুর অতুল রায় বলেন, সিজারের সময় ওটির মধ্যে রোগী মারা যায়। কিন্তু ক্লিনিক মালিক কর্তৃপক্ষ ও ডাঃ ইয়াসমিন ইসলাম নিজে এ্যাম্বুলেন্সে করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে নেওয়া নাটক করে আমাদের সাথে প্রতারনা করে।
এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল গফুর জানান, একজন প্রসুতি মাতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকার লোকজন একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ঘেরাও করে রেখেছে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করে। এখনো পর্যন্ত মৃতের পরিবার থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্লিনিক মালিক রেজাউল করিম রিপন জানায়, রোগীটি দীর্ঘদিন ধরে ডাঃ ইয়াসমিন ইসলাম এর তত্ত্বাবধানে ছিল তিনি নিজেই রোগীটি সিজারের পর রোগীটি অসুস্থ হয়ে পড়লে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।
২১ জুন ভোর পযন্ত স্থানীয়রা একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ঘেরাও করে রেখেছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য পুলিশ সেখানে অবস্থান করেছিলো। পরে সকাল ৭ টায় ক্লিনিক মালিক কর্তৃপক্ষ ও নিহত প্রসুতি আশা মনি রায়ের পরিবার আপোসে মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়। এবং এলাকাবাসী ও নিহতর পরিবার সকালে ক্লিনিক হতে চলে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাক্তার আফরোজ সুলতানা লুনা জানায়, একতা ক্লিনিক টির পূর্বে কাগজপত্র ছিল। বর্তমানে তারা নবায়ন করে নাই। গতকালকে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাটি আমি জেনেছি। উর্দ্বধন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, এটি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসারদের সাথে কথা বলে তদন্ত সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply