বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত সেলসফোর্স বাজারে আনলো এজেন্টফোর্স ৩: এআই এজেন্ট পরিচালনায় সহজ সমাধান ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও ১ দর বৃদ্ধির শীর্ষে দেশ গার্মেন্টস প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তি ও স্বীকৃতির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ ও দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই- বাংলাদেশ নারী মঞ্চ নাসিরনগরে হত্যা মামলার আসামী ধরতে ওসি’র গড়িমসি, ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন লেনদেনের শীর্ষে বিচ হ্যাচারি রেকিট বেনকিজারের নগদ লভ্যাংশ বিতরণ গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভা ০৭ জুলাই

বরিশালের পুলিশ সদস্য রুমা পারভীন অসহায়দের আশার আলো 

এস এল টি তুহিন
  • আপডেট : শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১১ Time View

বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশাল শহরের নগরীর কোতোয়ালি থানায় কর্মরত সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) রুমা পারভীন হয়ে উঠেছেন অসহায় মানুষের ভরসা ও মানবতার প্রতীক। পুলিশ বলতেই আমাদের অনেকের মাথায় ভেসে ওঠে কঠিন শৃঙ্খলা আর নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের দৃশ্য। কিন্তু সেই পরিচিত ছকের বাইরে গিয়ে রুমা পারভীন প্রমাণ করেছেন, মানবিক গুণাবলী নিয়ে দায়িত্বশীল কাজ করে সমাজের বিপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এক মহান উদাহরণ তৈরি করা যায়।

রুমা পারভীন, চাকরিজীবী একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে দিনের মূল সময় ব্যস্ত থাকেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে। এরপরও দিনের অবসরে তিনি ছুটে যান বরিশালের বস্তি এলাকা ও হতদরিদ্র মানুষের কাছে। কখনো খাবার নিয়ে, কখনো বা প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। নিজের বেতনের অংশ দিয়েই তিনি এই উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। 

এ বিষয়ে রুমা পারভীন -এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার জীবনে সঞ্চয়ের কোনো লক্ষ্য নেই। বরং অসহায় মানুষের মুখে হাসি দেখাতেই তার স্বার্থকতা।

রুমা পারভীন বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করেন, নিজের কষ্টের টাকায় কেন সাহায্য করেন? আমার মনে হয়, যদি একটু সহায়তায় কারো অভুক্ত পেট ভরে যায়, বা কারো দুঃখ একটু কমে যায়, সেটাই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। আমরা সমাজের জন্যই কাজ করি, এ সমাজ আমাদের সবকিছু দিয়েছে। দায়িত্বের পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোও আমাদের কর্তব্য। গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি ও ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিও আমাকে নিয়মিত সহযোগিতা করে। এ ছাড়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত মোঃ আলী আশরাফ ভূঞা স্যারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও এ কাজে বিশেষ সহায়তা করেন।

রুমা পারভীনের স্বামী জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তা। দুজনই সরকারি চাকরিজীবী এবং তাদের আয়ের একটি বড় অংশ সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যয় করেন। সংসারের খরচ মেটানোর পর যে টাকা বেঁচে থাকে, তা দিয়ে তারা দুস্থ ও অভাবী মানুষদের সহযোগিতা করে থাকেন। তাদের এই মহান উদ্যোগে অনেক সময় সমাজের অন্য সামর্থ্যবান ব্যক্তিরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন।

বরিশালের একাধিক বস্তি এলাকায় রুমা পারভীনের উপস্থিতি অনেকেরই জীবনে আশার আলো জ্বেলেছে। রুমার মানবিক কার্যক্রমের আওতায় বহু পরিবার পেয়েছে খাবার ও পোশাকের সহায়তা। শুধু সহায়তা দিয়েই থেমে যান না তিনি। খোঁজ নিয়ে দেখেন, তারা কোথায় কষ্ট পাচ্ছে, কীভাবে তাদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করা যায়।

পুলিশের পোশাকের আড়ালে রুমা পারভীন যেন এক আদর্শ ও আলোকিত মানুষ। তার মানবিকতা আমাদের শিক্ষা দেয় দায়িত্বের বাইরে কিছু করার মধ্যে যে আনন্দ লুকিয়ে থাকে, তা আর কোনো পার্থিব অর্জন দিতে পারে না। মানবিকতা যদি সবার মনেই জায়গা পেত, তবে দেশে দারিদ্র্য বা অভাব-অনটনের জায়গা থাকত না।

রুমা পারভীনের মতো ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তকে আমাদের সবার অনুপ্রেরণা হিসেবে নেওয়া উচিত। সমাজের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাইলে বড় উদ্যোগ নয়, সামান্য আন্তরিকতাই যথেষ্ট। রুমা প্রমাণ করে দিয়েছেন, পরিবর্তন শুরু হয় একক উদ্যোগ থেকেই। আর সেই পরিবর্তন বহু মানুষের জীবনে নিয়ে আসতে পারে আশার বার্তা।

বরিশাল নগরীর রসুলপুর এলাকার এক হতদরিদ্র বাসিন্দা সুমন মিয়া জানান, একদিন পরিবারের কাউকে খাওয়ানোর মতো কিছুই ছিল না। তখন রুমা আপা এসে আমাদের জন্য খাবার আর পোশাক এনে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি পরে এসে জানতে চেয়েছিলেন, আমরা ভালো আছি কি না। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, একজন পুলিশ অফিসার এতটা আন্তরিকভাবে সাহায্য করতে পারেন। রুমা আপার মতো মানুষদের জন্য আমরা আজও বেঁচে থাকার সাহস পাই।

আরেকজন সুবিধাপ্রাপ্ত ভুক্তভোগী নাজমা বেগম বলেন,আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। রুমা আপা আমাকে সাহায্য করেছিলেন একটা ছোট ব্যবসা শুরু করতে। তিনি শুধু সাহায্যই করেননি, আমাকে সাহসও দিয়েছেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তার জন্য আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

রুমা পারভীনের এমন ছোট ছোট উদ্যোগ বদলে দিচ্ছে অসংখ্য মানুষের জীবন। তাদের কথাগুলো প্রমাণ করে, একটু ভালোবাসা আর সহানুভূতি অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

এ বিষয়ে বরিশালের মেট্রোপলিটন  উপ-পুলিশ কমিশনার ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত মোঃ আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, রুমা পারভীনের মানবিক উদ্যোগ আমাদের বাহিনীর গর্বের বিষয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিকতাই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তার মানবিক দিকগুলো আমাকে মুগ্ধ করে, তাই আমি সবসময় তাকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। রুমার মতো পুলিশ সদস্যরা পুলিশি সেবার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এমন উদাহরণ আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে। 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS