আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমকম্পে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে গোটা এলাকা। মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। শনিবারের ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। উদ্ধারকারীরা সামান্য সরঞ্জাম নিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া বাড়িগুলোতে জীবিতদের সন্ধান করছেন।
শনিবার আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর অন্তত ৮টি আফটারশক আঘাত হানে। এটা হেরাতের প্রাদেশিক রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) উত্তর-পশ্চিমের দুর্গম অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ভূমিকম্প অন্যান্য অনেক এলাকায়ও অনুভূত হয়। তখন সেখানকার বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে।
স্থানীয় প্রশাসনের মুখপাত্র বিলাল করিমি রোববার দিনের শুরুতে জানান, ‘দুর্ভাগ্যবশত, হতাহতের সংখ্যা কার্যত অনেক বেশি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও অস্পষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজারের বেশি। চূড়ান্ত পরিসংখ্যান কেমন হবে তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’
দেশটির দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২,০৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৯,২৪০ জন। এছাড়া ১,৩২৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী বশির আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঝাঁকুনির মধ্যেই সব ঘর ভেঙে পড়ে। যারা ঘরের ভিতরে ছিল তাদের কবর দেওয়া হয়েছে। এমন পরিবার আছে যাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।’
আরেক বাসিন্দা নেক মোহাম্মদ এএফপিকে জানান, শনিবার সকাল ১১টার দিকে প্রথম ভূমিকম্পের সময় তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। তার কথায়, ‘আমরা বাড়িতে এসে দেখলাম যে, সেখানে আসলে কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবকিছু বালিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৩০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত, আমাদের কাছে কিছুই নেই। কোন কম্বল বা অন্য কিছু নেই।’
শনিবার গভীর রাতে ডব্লিউএইচও বলেছে, ‘তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।’
হেরাত শহরের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে অবস্থান করছে। প্রথম ভূমিকম্প অনুভূত হলে স্কুল, হাসপাতাল ও অফিস খালি করা হয়। তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় হতাহতের কিছু খবর পাওয়া গেছে।
২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বিদেশি সাহায্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে আফগানিস্তান ইতোমধ্যেই একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটের কবলে পড়েছে।
ইরানের সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের প্রদেশ হেরাত। সেখানে অন্তত ১৯ লাখ লোক বাস করে। এই অঞ্চলটি প্রচন্ড খরার মুখোমুখি হয়েছে। এটি ইতোমধ্যেই সেখানকার কৃষি সম্প্রদায়কে পঙ্গু করে দিয়েছে।
আফগানিস্তান প্রায়শই ভূমিকম্পে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণীতে, যা ইউরেশিয়ান এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থিত।
গত বছরের জুন মাসে একটি ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সেখানকার সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
-এএফপি
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply