বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

পুরোনো তহবিল ব্যবহারেও ধীরগতি, আইপিওহীন পুঁজিবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ০ Time View

সারা বিশ্বে শিল্পায়নে মূলধনের জোগান আসে পুঁজিবাজার থেকে। যদিও বাংলাদেশে শিল্পায়নের মূলধন জোগানের প্রধান উৎস ব্যাংক খাত। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের অবদান যৎসামান্য। তবে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে নতুন কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। ফলে শিল্প খাতে দীর্ঘ সময় ধরে নতুন অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আগের আইপিও থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহারে ধীরগতি। যেসব কোম্পানি আগের বছরগুলোতে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য অর্থ তুলেছিল, তাদের অনেকে এখনো সেই টাকা কাজে লাগাতে পারেনি। কেউ কেউ সামান্য ব্যবহার করেছে, আবার কেউ এক টাকাও ব্যবহার করতে পারেনি।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে অন্তত দুই ডজন কোম্পানি আইপিও থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু তাদের অনেকে এখনো সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবহার করতে পারেনি। কয়েকটি কোম্পানি বারবার সময় বাড়িয়েও বিনিয়োগে নামতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেশ কয়েকটি কোম্পানি তাদের সংগৃহীত তহবিলের কোনো অংশই কাজে লাগাতে পারেনি।

গত অর্থবছরে বেস্ট হোল্ডিংস সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যবহার করেছে। কোম্পানিটি ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে খরচ করেছে ৭৭ কোটি টাকা বা ২২ শতাংশ। টেকনো ড্রাগস ১০০ কোটির মধ্যে ব্যবহার করেছে ৬৪ কোটি টাকা বা ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৪২৫ কোটি টাকার বিশাল তহবিল থেকে খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ব্যাংকটির দাবি, উপযুক্ত বিনিয়োগের সুযোগ না পাওয়ায় তারা টাকা ব্যবহার করতে পারেনি।

একই সময়ে সিকদার ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকার মধ্যে ব্যবহার করেছে ২ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ৭৫ কোটির মধ্যে খরচ করেছে ৮ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি পেস্টিসাইড ও আমান কটন ফাইব্রাস তাদের আইপিও তহবিল থেকে এক টাকাও ব্যবহার করতে পারেনি।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজার থেকে যেসব কোম্পানি অর্থ তুলেছিল, তাদের অনেকগুলোর অবস্থাই এখন দুর্বল। উদ্দেশ্যহীনভাবে বাজারে এনে এ ধরনের কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্ত। তারা অভিযোগ করছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সম্প্রসারণের বদলে নিজেদের স্বার্থে আইপিওর অর্থ ব্যবহার করছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘অনেক কোম্পানি আসলে অবাস্তব ব্যয় পরিকল্পনা জমা দিয়ে অনুমোদন নিয়েছে। কোথায় টাকা ব্যয় করবে বা ব্যয় করে মুনাফা আদায় সম্ভব কি না, সে বিষয়ে তারা কোনো বিশ্লেষণই করেনি। কিছু কোম্পানি তো সরাসরি আইপিওর অর্থ লুটপাট করছে।’

পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের সদস্য আল-আমিন বলেন, আইপিও প্রক্রিয়ায় এখন জবাবদিহি আনার চেষ্টা চলছে। অডিট ফার্ম, ইস্যু ম্যানেজার, স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা—সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে আনা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে আসা আইপিও বিনিয়োগকারীদের আস্থা জোগাতে পারবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভালো কোম্পানিগুলোকে আনতে আইপিও প্রক্রিয়া সংস্কারের বিকল্প নেই। আমাদের বাজার যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে আইপিও শূন্য হয়ে আছে, সেহেতু আমরা মনে করি এখন সংস্কার শেষে ভালো কোম্পানিগুলোই আসবে। পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স এটি নিয়ে কাজ করছে। আমরা চাই কোথায় সমস্যাগুলো হচ্ছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা হোক।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, ‘এখন আর দুর্বল কোম্পানিকে আইপিওতে আসতে দেওয়া হবে না। পাবলিক ইস্যু বিধিমালা ও অন্যান্য আইন মেনে আইপিওতে আসতে হবে। সংস্কার শেষ হলে ভালো কোম্পানিগুলো আসবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Comments are closed.

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS