শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন

সিলেটের ডিমের বাজার আকাশ চুম্বী

আবুল কাশেম রুমন
  • আপডেট : রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪
  • ১১৩ Time View

সিলেট প্রতিনিধি: গত কয়েক দিন ধরে সিলেটে ডিমের বাজারের দাম নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। হঠাৎ করে কয়েক সপ্তাহ থেকে সিলেটের বাজার গুলোতে ডিমের দাম বেড়েছে লাগামহীন ভাবে। সাধারণ ক্রেতারা বর্ষা মৌসুম ও বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেটের মানুষ ডিমের উপর নির্ভরশীল হলে দাম বৃদ্ধির কারণে হিমশিম ক্ষেতে হচ্ছেন। আকাশচুম্বী দামের জন্য মাছ-মাংস সাধারণ মানুষের নাগাল ছাড়া হয়েছে অনেক দিন ধরে।

ডিমের দাম এই হঠাৎ লাফের প্রভাব পড়েছে শহর থেকে মফস্বলেও। এক সময়ের ত্রিশ টাকা হালি দামের ডিম বছর খানেক আগে যে পঞ্চাশ ছাড়িয়েছিল তারপর মাঝেমধ্যে নিচে নামলেও চল্লিশের নিচে আর নামেনি। সেই ডিম এখন হালিতে দাম ষাট টাকা ছাড়িয়েছে। দোকান ও স্থান ভেদে দাম দু এক-টাকা এদিক সে দিক হচ্ছে কেবল। সিলেটে ভয়ঙ্কার এক সিন্ডিকেটের জালে আটকে গেছে ডিমের বাজার।

এ দিকে খুচরা বাজারে ডিম এখন শুধু ব্যবসা চালু রাখার জন্যই বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান দোকানীরা। নগরীর কদমতলির মুদি দোকানী মাতৃ স্টোরের কর্ণধার টিটু জানান, ডিম দিয়ে ব্যবসা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। যে হারে ডিমের দাম বাড়ছে তাতে ডিম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখার কোনো সুযোগ নেই। এই অবস্থায় ডিমের দাম সপ্তাহ দুয়েক ধরে পঞ্চান্ন থেকে ষাটের মধ্যে হালি প্রতি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে শুধু ক্রেতা ধরে রাখার জন্য দোকানে ডিম রাখতে হচ্ছে  কোনো লাভের সুযোগ নেই। যে দিন দু একটা ডিম ভাঙা বের হয় সে দিন খরচের চেয়ে লোকসান গুণতে হয়। এখন ডিম বিক্রি শুধু ক্রেতা ধরে রাখার জন্য।

ডিমের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে হোটেল রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানেও। চল্লিশ টাকার মোগলাই বিক্রি হচ্ছে ষাট থেকে আশি টাকা। ক্রেতা কমে যাওয়ায় অনেক খাবারের দোকান বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হাফ ডিমের মোগলাই চালু করেছে। নগরীর জল্লারপারে থ্রি সিস্টার স্ন্যাকবারের গৌতম রায় বলেন আগে সন্ধ্যার সময় সবচেয়ে বেশি মোগলাই পরোটা বিক্রি হতো। ফুল ডিমের একটা মোগলাইয়ের দাম ছিল চল্লিশ টাকা। এখন ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ষাট টাকা করা হয়েছে। ক্রেতা কমে যাওয়ায় অর্ধেক ডিমে ছোটো সাইজ করতে বাধ্য হয়েছি। তাছাড়া আগে সকালে পরোটার সাথে অনেক ডিম মামলেট বিক্রি হতো। এখন সকালে ডিম মামলেট বিক্রি হয়না বললেই চলে। ডিমের দামের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমরাও খাবারের দামের কোনো তাল মেলাতে পারছিনা। আগের দিন এসে যে দাম দেখে যান লোকজন পর দিন এসে আবার তা বদলে যায়। এতে আমাদের ব্যবসা নষ্ট হচ্ছে। ডিম নিয়ে এত কাহিনি আগে হয়নি।

জানা গেছে, কর্পোরেট নামের ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের পেটে ঢুকে গেছে ডিমের বাজার। এতে লোকসান গুনতে গুনতে অনেকেই ব্যবসা  ছেড়ে দিচ্ছেন। শুধু সিলেট নয়, রাজধানী থেকে মফস্বল পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণে এই সিন্ডিকেটের। যে সারাদেশে একসাথে সব মুরগি ডিম পাড়ে তাই সব জায়গায় ডিমের একই দাম। এই সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায়। ডিমের দাম বাড়ানো বা কমানোর জন্য একটা কমন বক্তব্য দেন তারা। যেমন চাহিদা কমে গেছে বা চাহিদা বেড়ে গেছে। শীত, গরম, রমজান, কোরবানি, হরতাল-অবরোধে ডিমের জোগান কম, জোগান বেশি।

দেখা গেছে, প্রান্তিক একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০.২৯ টাকা। ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা যদি ভোক্তা পর্যায়ের দাম থাকে তবে  যৌক্তিক দাম। কিন্তু সেই ডিমের দাম যেভাবে নির্ধারণ হয়। প্রথমে খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করেন,পরে বিভিন্ন জায়গায় রাতে ডিম পাঠিয়ে দেন, সকালে ফজরের নামাজের পরে তারা মূল্য নির্ধারণ করে সব জায়গায় মোবাইল এস এম এস ও ফেইসবুকের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে বাড়তি বা কমতি দামকে বাস্তবায়ন করে। অন্য সবাই ফলো করে।

এতে বলা হয়, প্রতিদিন ১০০ ডিমে ১০-২০ টাকা করে কমিয়ে ৭ টাকা প্রতি পিচে দাম নামিয়ে আনে, আবার একই নিয়মে বাড়িয়ে দিয়ে ডিমের দাম প্রতি পিস ১৩ টাকায় উঠিয়ে ফেলে। তারা কম দামে ডিম কিনে ৫ থেকে ৭ দিন সংরক্ষণ করতে চাইলে  দোকান অথবা গোডাউনে রাখে এবং বেশি দিন রাখতে চাইলে কোল্ড স্টোরেজ করে। এতে সারাদেশের ডিম ব্যবসায়ীরা লাভবান, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদক ও ভোক্তা। পরে সেই ডিম সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বিক্রি করে অতি মুনাফা করে। অন্যদিকে উৎপাদক ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS