ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পঞ্চবটি পুকুরপাড় গ্রামে মাদক বিরোধি অভিযানে ডিবি পুলিশের হামলা চালায় এলাকাবাসি। গতকাল রাত আনুমানিক আটটার সময় পুকুর পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের অভিযানে নাইম (১৫) ও বিশাল (১৬) নামে দুই কিশোরকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মামলা দায়ের করেছে কিশোরগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা যায়, ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত আটটার দিকে পৌর শহরের পুকুরপাড় এলাকায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশের চার সদস্য। এ সময় ডিবি পুলিশের এক সদস্যর গায়ে ইউনিফর্ম থাকলেও বাকিরা ছিলেন সিভিলে। এ সময় উল্লেখিত দুজনকে আটক করে।
স্থানীয়রা জানান, পুকুর পাড় এলাকায় রাত আটটার দিকে ডিবি পুলিশ প্রথমে কাকলী নামে এক মহিলার ঘরে তল্লাশী করে। কাকলী একজন রিকশা চালকের স্ত্রী। এ সময় সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই যুবক নাঈম ও বিশাল মিয়াকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে স্থানীয়রা ডিবি পুলিশের কাছে আটকের কারণ জানতে চাইলে ডিবি বলেন আটককৃতরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। স্থানীয়দের দাবী বিশাল ও নাইম তারা ভাল ছেলে।
এনিয়ে স্থানীয়দের সাথে ডিবি পুলিশের তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী ডিবি পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে অস্ত্র উটিয়ে ভয় দেখিয়ে জড়ো হওয়া লোকজন সরে গেলে আটককৃতদের নিয়ে থানায় চলে আসেন ডিবির টিম।
স্থানীয় বাসিন্দা লতিফা বেগম, উছমান, মনোয়ারা বেগম, রমজান মিয়া ও আশা বেগম জানান, প্রতিদিনের ন্যায় নাঈম ও বিশাল তার কর্মস্থল থেকে বাড়িতে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে খেলছিল। হঠাৎ নাঈম ও বিশালকে ডিবি পুলিশের এসআই মকবুল হোসেন, নূর মোহাম্মদ, এএসআই আশরাফুল, পুলিশ কনস্টেবল শারমিন শিলা, বিশাল ও নাইমকে আটক করে। বিশাল ও নাইমকে আটকের কারণ জানতে চাইলে ডিবি পুলিশ লোকজনকে সদুত্তোর না দিয়ে উল্টো এলাকাবাসীর উপরে চড়াও হয়। এ সময় ডিবি পুলিশের পড়নে কোন পোশাক ও এপ্রোণ ছিলো না। নাঈম একজন টাইলস মিস্ত্রি ও বিশাল একজন ওয়ার্কসপ মিস্ত্রি। এর আগে ডিবি পুলিশ এক রিকশা চালকের ঘরে অভিযান চালিয়ে রিকশা কেনার নগদ লক্ষাধিক টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন, ডিবি পুলিশ দুদিন পর পর পঞ্চবটি এলাকায় অভিযান চালায়। এ অভিযানকে আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু প্রায় সময়ই তারা নিরীহ মানুষদেরকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী উছমান মিয়া বলেন, তারা সাথে করে মাদক নিয়ে আসে। আমার বাসায় চার থেকে পাছ মাস পূর্বে আমার মেয়েকে ডিবি পুলিশ নিয়ে যেতে চাইলে আমি তাদেরকে নগত তিন লক্ষ টাকা দিলে তারা আমার মেয়েকে ছেড়ে দেয়।
পুকুরপাড় এলাকার শীষ মাদক ব্যাবসায়ী মাইগ্যা আলম বলেন, গত কয়েক মাস আগে আমাকেও তারা আটক করে। তখন আমার কাছে কোন মাদক ছিলনা। তারা সাথে করে কয়েক বোতল ফেনসিডিল নিয়ে আসে। আমাকে বলে আট লাখ টাকা না দিলে তারা আমাকে মামলা দিয়ে চালান দিয়ে দেবে। পরে আমি তাদেরকে এক লক্ষ সত্তুর হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক মহিলা বলেন, ডিবি সদস্যরা পারভিন, চায়না, উছমানসহ আরো অনেকের কাছ থেকে ডিবি জন প্রতি কয়েক লক্ষ করে টাকা নিয়েছে। তারা বড় মাদক ব্যাবসায়ীদের ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে যায়।
হামলার বিষয়টি এড়িয়ে যান কিশোরগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশের এসআই নূর মোহাম্মদ এবং তিনি কাকলীর ঘর থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পঞ্চবটি এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বুকুলীকে আটক করতে অভিযান পরিচালনা করি। বিশাল মাদক ব্যবসায়ী বকুল বেগমের ছেলে ও নাঈম তার সহযোগী। আমরা অভিযানে বিশাল ও নাঈমের কাছে এক বোতল ফেনসিডিল ও ৩ বোতল স্কাফ উদ্ধার করি। নাঈম ও বিশালকে আটকের সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, ডিবির অভিযানের বিষয়ে তারা আমাকে কোন কিছু জানায়নি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply