ভারতের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদি অন্যতম আলোচিত নাম। ৩০ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ৯ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতকে বিশ্ব রাজনীতিকে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার পেছনে নরেন্দ্র মোদির অবদান অনস্বীকার্য। বাস্তবতাও বলছে, বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত অন্যতম খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে।
ভূরাজনৈতিক দিক থেকে কৌশলগত অবস্থান, অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উত্থান, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজার ইত্যাদি মিলিয়েই ভারতের অবস্থান বিশ্ব পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, ভারতের এমন অবস্থানে পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অবদানই বেশি।
বিশ্লেষকদের মত, মোদির শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং আত্মবিশ্বাস তাকে বিশ্বের শক্তিধর নেতাদের কাতারে নিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের নেতৃত্ব দেয়া মোদি এখন পশ্চিমা বিশ্বের কাছে অতি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব। কারণ তাদের কাছে মোদির ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক খেলোয়াড় যার রয়েছে চীনকে প্রতিহত করার সক্ষমতা।
মোদির নেতৃত্বের মূল্যায়ন করতে গিয়ে জি-২০ জোটে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অমিতাভ কান্ত এনডিটিভিকে বলেন, ‘ভারত এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। এর কারণ হলো, প্রধানমন্ত্রীর সক্ষমতা। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার সক্ষমতাই ভারতকে এগিয়ে নিয়েছে।’
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর বাইরে জাপান সফরের যান মোদি। সে সময় তিনি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। গত বছরের জুলাইয়ে যখন শিনজো আবেকে হত্যা করা হয় তখন মোদী গভীরভাবে শোকাহত হন। তার রাষ্ট্রীয় অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে জাপান গিয়েছিলেন মোদি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে মোদি ভারতকেই এগিয়ে নেয়ার কাজ করেছেন। এ বিষয়ে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত কিষেণ এস রানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি মাস্টার স্ট্রোকের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি তার নিকট প্রতিবেশী দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলো, মরিশাস এবং কাছাকাছি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।’
ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করও মোদির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এবং এর এজেন্ডা ঠিক করে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মৌলিক অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুণগত পরিবর্তন এসেছে। কয়েক দশক কেবল একে অপরের সঙ্গে চোখাচোখি করার পর এখন ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। আমাদের এখন মৌলিক কিছু বিষয়ে ঐক্যমত্য রয়েছে। যেখানে পৌঁছাতে উভয় পক্ষকে দীর্ঘ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘নয়া দিল্লির এক সময় মস্কোর সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল এই দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর ভারতকে বিবেচনা করেনা। এবং ভারতও যুক্তরাষ্ট্রকে দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে-এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে না। যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্তমূলকভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করায় ভারত এখন তার স্বাভাবিক অংশীদার। নরেন্দ্র মোদিই এই অংশীদারত্ব গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক গড়ে তুললেও দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এমনকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতেও তা খুব একটা বদলায়নি।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ভারত ইউক্রেনের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এর মাধ্যমে ভারত একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে। আর তা হলো, ভারত তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে স্বাধীনভাবে। এই সূত্র ধরেই মোদি পুতিনকে স্পষ্ট বলেছেন, এটি যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। আবার দেশটিতে থেকে পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে তেল কেনাও অব্যাহত রেখেছে।
ভারতের উত্থানের আরেকটি দিক হতে পারে জি-২০ জোট। চলতি বছর ভারত জোটটির সভাপতি। সভাপতির দায়িত্বে থাকা নরেন্দ্র মোদি এবারে সম্মেলনে চেষ্টা করবেন পশ্চিমা বিশ্ব, চীন এবং রাশিয়াকে একই আলোচনার টেবিলে এনে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে।
এসবের বাইরেও ভারতকে তার সবচেয়ে বড় কৌশলগত প্রতিপক্ষ চীনকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় চীনের ভূ-কৌশলগত হুমকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে ভারত অন্যান্য ক্ষেত্রে সফল হলেও এখনও তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে চীন। এই সমস্যা মোকাবিলায় নিপুণ কূটনীতির পাশাপাশি মানবিক নেতৃত্বও জরুরি। মোদি সেখানেও সফল হবেন সেটাই বিশ্বাস বিশ্লেষকদের।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply