নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশে শব্দদূষণ রোধে ১৪টি সুপারিশ করেছে স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ করে সংগঠনটি। ৩ মার্চ বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো– হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ করা; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে আবাসিক এলাকায় শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল বাস্তবায়ন করা; উচ্চশব্দে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; পেশাগত কারণে কাউকে উচ্চশব্দে থাকতে হলেও তা যেন দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টার বেশি না হয়; সব পাঠ্যসূচিতে শব্দদূষণ রোধের সচেতনতা আওতাভুক্ত করা; পাবলিক প্লেসে মাইক কিংবা স্পিকার ব্যবহারে শব্দের মাত্রা ৫৩ ডেসিবেলের মধ্যে রাখার জন্য আইন প্রণয়ন করা; শব্দদূষণ রোধে ট্রাফিক পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া; আবাসিক এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করে তা বাস্তাবায়নে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর ১০টি স্থানে ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবেলের ওপর শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব জানা যায়।’
জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার বলেন, ‘আমরা এমন এক জায়গায় বসবাস করি যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে শব্দদূষণ প্রবণ এলাকা। শব্দদূষণ প্রতিরোধ আইনে জেল ও জরিমানার বিধান থাকলেও সেটা প্রয়োগ করা হয় না। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব তো আছেই। মানুষকে সচেতন করতে পারলে শব্দদূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক বলেন, ‘কান বাদ দিয়ে যেমন শ্রবণ হয় না, তেমনই কানে না শুনলে মানুষ কথাও বলতে পারে না। তাই শব্দ দূষণ রোধে আমাদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শুধু আইন প্রয়োগ করে এটি রোধ করা সম্ভব না।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ শব্দদূষণ প্রতিরোধ আইনে ত্রুটির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই আইনে নীরব জোন, আবাসিক জোন, বাণিজ্যিক জোন ভাগে শব্দের সহনীয় মাত্রা ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় একইসঙ্গে আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। চাইলেই ঢাকায় জোন ভাগ করা সম্ভব নয়। শব্দদূষণের কারণে ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু ৭ বছর কমে যাচ্ছে এবং ঢাকার বাইরে ৫ বছর দুই মাস কমে যাচ্ছে। তাই শব্দদূষণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply