সিডনি কিংবা অ্যাডিলেড নয় পাকিস্তানের টিকিট কাটতে হবে করাচির। এমন কিছুর জন্যও হয়তো প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। তবে সমীকরণ বদলেছে, পাকিস্তানও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, নেদারল্যান্ডের সাউথ আফ্রিকা জয়ে বাবর আজমদের শেষ চারের স্বপ্ন আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। শেষ ম্যাচে কেবল বাংলাদেশকে হারালেই পাকিস্তানের টিকিট কনফার্ম হবে সিডনি বা অ্যাডিলেডের। শাহীন শাহ আফ্রিদির দারুণ বোলিংয়ের পর বাবর-মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে বাতিল হলো করাচির টিকিট। শেষ দল হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ডকে অনায়াসে হারিয়ে মেলবোর্নের ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে বাবরের দল। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া, ঘুরে দাঁড়ানো যেন পাকিস্তানের ক্রিকেটের পুরোনো রীতি। পাকিস্তানের এমন প্রত্যাবর্তনে উঁকি দিয়েছে বিরানব্বইয়ের ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
বিরানব্বইয়ের পুনরাবৃত্তি করতে নিজেদের সবটা উজার করে দিতে চান পাকিস্তানের অধিনায়ক। ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে বাবর বলেন, ‘হ্যাঁ, (১৯৯২ বিশ্বকাপের সঙ্গে) মিল তো আছেই। আমরা ট্রফিটা জেতার চেষ্টা করব আর এই দলটার অধিনায়কত্ব করাও গর্বের, বিশেষ করে এমন একটা মাঠে (মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড)। ইনশা আল্লাহ আগামীকালের ম্যাচে আমরা নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দেব।’
জস বাটলারের অনুপ্রেরণা অবশ্য ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ জিতে ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল ইয়ন মরগানের দল। বছর তিনেক আগে লর্ডসে জেতা সেই ফাইনালের অভিজ্ঞতা ইংলিশদের বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। ফাইনালের আগে বাটলার বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা সেই (২০১৯) বিশ্বকাপের ফাইনালই হোক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিভিন্ন ফাইনালই হোক কিংবা দল হিসেবে আমরা যেকোনো অভিজ্ঞতা যেটার মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছি, সেসব আমাদের সুবিধা দেবে।’
শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মিশনে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ের পরিসংখ্যান অবশ্য ইংল্যান্ডের পক্ষে কথা বলছে। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৮ দেখায় ইংলিশদের জয় ১৭ ম্যাচে। বিশ্বকাপের মঞ্চে আরও দুর্দান্ত ইংল্যান্ড। ২০০৯ ও ২০১০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেললেও দুবারের দেখায় হারেনি বাটলররা। তবে ইংল্যান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে পাকিস্তানের দুর্দান্ত বোলিং লাইন আপ। পাকিস্তান বরাবরই দারুণ সব পেস বোলার নিয়ে হাজির হয়।
পাকিস্তানের পরিকল্পনাতেও প্রায় সবটা জুড়ে পেস ইউনিট। নিজেদের বোলিং আক্রমণ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হলেও ইংল্যান্ডের সামর্থ্যকে হেয় করে দেখেননি বাবর। ফাইনাল জিততে নিজেদের পেস আক্রমণকে কাজে লাগাতে চান পাকিস্তানের অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল। ভারতকে হারিয়ে তাদের ফাইনালে আসা সেটাই প্রমাণ করে। আমরা আমাদের পরিকল্পনায় ঠিক থাকব এবং ফাইনাল জিততে আমাদের শক্তি পেস আক্রমণকে কাজে লাগাব।’
ইংল্যান্ডের বোলিং ইউনিটকেও একেবারে ফেলে দেয়ার সুযোগ নেই। মার্ক উড ফিট হয়ে ফিরলে তার সঙ্গে থাকবেন ক্রিস ওকস এবং দারুণ ছন্দে থাকা স্যাম কারান। শুরুর দিকে ছন্দে না থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন আদিল রশিদ। সেমিফাইনালে বিরাট কোহলি-সূর্যকুমার যাদবদের একাই আটকে রেখেছিলেন ডানহাতি এই লেগ স্পিনার। তবে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন দুই দলের ব্যাটিং অর্ডার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সামর্থ্য বিবেচনায় পাকিস্তানের চেয়ে খানিকটা এগিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। ছন্দ খুঁজে পাওয়ায় পাকিস্তানের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন অ্যালেক্স হেলস-বাটলার। সেমিফাইনালে নিজেদের সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়েছেন এই দুই ওপেনার। তাদের মতো ভয় ধরাতে পারেন বেন স্টোকস, হ্যারি ব্রুক, লিয়াম লিভিংস্টোন, মঈন আলীরা। এদিকে ইংলিশ পেসারদের সামলে উঠতে পারলে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেন বাবর-রিজওয়ান জুটি। সুপার টুয়েলভে পারফর্ম করতে না পারলেও সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুজনই।
মেলবোর্নে তাই সময়ের অন্যতম সেরা বোলারদের সঙ্গে ব্যাটারদের লড়াইটা রোমাঞ্চ জাগাবে। তবে সব উত্তেজনা আর রোমাঞ্চের মাঝে চোখ রাঙাচ্ছে বেরসিক বৃষ্টি। আবহাওয়ার ব্যুরোর দাবি, মেলবোর্নে ফাইনালের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ৯৫ শতাংশের মতো। সেটা ছুঁয়ে দেখতে পারে ১০০ শতাংশকেও। শুধু ফাইনালের দিনই নয়, বৃষ্টি হতে পারে রিজার্ভ ডেতেও।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply