এস এল টি তুহিন , বরিশাল: “আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি, পূজার সময় এল কাছে।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতই এই ভাদ্র শেষে আশ্বিনে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। তাই তো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছে দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। আর কিছুদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। দেবী দূর্গাকে স্বাগত জানাতে মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আগৈলঝাড়ার মৃৎ শিল্পীরা। মূলত আনুষ্ঠানিক ভাবে মহালয়ার দিন থেকে দেবীর আগমনী উৎসব শুরু হয়। কিন্তু পাল বা মৃৎ শিল্পীদের গৃহে ইতিমধ্যে আগমন ঘটেছে দেবী দূর্গার। তাইতো খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন মূর্তি তৈরির কারিগররা। মূর্তির মূল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে শ্রাবন মাসের শুরু থেকেই। এখন চলছে মাটির প্রলেপের কাজ। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা। আগামী ১ অক্টোবর মহালয়া, ৫ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজা। মন্ডপ থেকে মন্ডপে বেজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার শব্দ। পাঁচ দিনের উৎসবের পর প্রতিমা বিসর্জনের পর ঘটবে এর সমাপ্তি। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে মহালয়ার দিন থেকে দেবীর আগমনী উৎসব শুরু হয়। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় এবার ১৪১টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এই মন্ডপগুলোর দেবী দূর্গার প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন স্থানীয় পাল বা মৃৎ শিল্পীরা। স্থানীয় মৃৎ শিল্পী লিটন পাল এর সাথে কথা বলে জানা গেল, তিনি ও তার পিতা কানাই পাল এ বছর ২৫টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তারা বংশগত ভাবে এ কাজ করে আসছেন। প্রতিটি প্রতিমা তৈরির জন্য পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারা আগৈলঝাড়া উপজেলা ব্যতীত শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ অন্যান্য উপজেলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পূজাতে প্রতিমা তৈরি করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ছন বাঁশের কাঠামোতে মাটির ঢেলা ভেঙ্গে পানি মিশ্রিত করে প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্রতিমা। পাশেই একটি কাঠের চৌকির উপর শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে দেবী দুর্গাসহ বিভিন্ন চরিত্রের মুখ-মন্ডল। অত্যাচারী অসুরের মুখ-মন্ডলের হিংস্রতা ম্লান হয়ে যাচ্ছে দেবী দূর্গার মুখ-মন্ডলের প্রফুল্ল হাসির শুভ্রতায়। আবেগ, ভালবাসা, শুদ্ধতা দিয়ে মাটির ঢেলাকে দেবী দুর্গায় রূপান্তর করছেন মৃৎ শিল্পী লিটন পাল ও তার পিতা কানাই চন্দ্র পাল। তারা আরও বলেন, আমাদের কারিগরদের জন্য দূর্গা পূজা সন্নিকটে। হাতে সময় একবারে কম। মাটির প্রলেপের কাজ শেষ করে ফিনিশিং করতে হবে। তাছাড়া আমরা মূর্তি শুকানো নিয়ে ঝামেলায় আছি কারণ এখন এই রোদ এই বৃষ্টি। মূর্তিগুলো ভাল ভাবে শুকানোর পরে করতে হবে রং এর কাজ। এছাড়াও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপগুলোতে গিয়ে দেখা মিলল রনজিৎ পাল, বলাই পাল সহ অন্য মৃৎ শিল্পীদের। তাদের কাছ থেকে জানা গেল তারাসহ আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় ২৫-৩০ জন মৃৎ শিল্পী প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুনিল কুমার বাড়ৈ বলেন, এ বছর ১৪১টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সকল মন্ডপে সর্বাধিক সহযোগিতা করা হবে। আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দূর্গা পূজা। এই দূর্গা পূজাতে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে থাকবে আনসার ও গ্রাম পুলিশসহ সেচ্ছাসেবী সদস্য বৃন্দ। তিনি আরও বলেন সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ তৎপর। এবারের শারদীয় দূর্গা পূজায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply