বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনে বাঁধা প্রদান ও উপজাতীয় উগ্রপন্থী কর্তৃক সরকারি খাস জমি দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

আজ ২৮ অক্টোবর ২০২৫ রোজ মঙ্গলবার বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর স্টুডেন্টস ইউনিটের উদ্যোগে “খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনে বাঁধা প্রদান ও উপজাতীয় উগ্রপন্থী কর্তৃক সরকারি খাস জমি দখলের প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন” অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন। লেঃ কর্নেল ফরিদুল আকবর অবঃ এর সভাপতিত্বে ও মোঃ মোস্তফা আল ইহযায এর সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. আবু মূসা, মোঃ আরিফ বিল্লাহ, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল রোকনউদৌলা অবঃ, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, মুফতী শহীদুল ইসলাম জেনারেল সেক্রেটারী বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন ও হেফাজত নেতা, লেঃ কর্নেল আসাদ উদ্দিন অবঃ, লেঃ কর্নেল ফেরদৌস আজিজ অবঃ, লেঃ কর্নেল হাসিনুর রহমান অবঃ, মেজর মাসুদ অবঃ, শামীম রেজা, মেজর শাহিন আলম অবঃ, মেজর মিজানুর রহমান অবঃ, আতাউল্লাহ খান, এড. জাকির সিরাজি, মুজাম্মেল মিয়াজি, রাসেল মাহমুদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়িতে রাষ্ট্রীয় খাসজমি দখল করে উগ্রপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনে বাধাঁ দিচ্ছে। কারণ এলাকাটি ইউপিডিএফ এর ঘাঁটি। এখান থেকেই উগ্রপন্থীরা অত্র-অঞ্চলের সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এলাকাটিতে রয়েছে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের গোডাউন এবং ট্রেনিং ক্যাম্প, এখান থেকে প্রকাশ্যে দেওয়া হয় অস্ত্রের প্রশিক্ষণ এবং সশস্ত্র মহড়া। এলাকাটি দূর্গম হওয়ায় সন্ত্রাসীরা নিরাপদে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সুযোগ পেয়ে থাকে। ‎আমরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটিতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়ে আসছি। এলাকাটিতে সেনাক্যাম্প স্থাপিত হলে সন্ত্রাসীরা দেশবিরোধী কার্যক্রম চালাতে পারবে না। তাই ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই জায়গায় সেনাক্যাম্প স্থাপন ঠেকাতে তারা নিরীহ পাহাড়ি, নিজেদের ঘরের মহিলা ও শিশুদের লেলিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। ‎ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা উক্ত এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপন না করার জন্য ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।স্মারকলিপিতে সেনাক্যাম্পের বিরুদ্ধে যে কারণগুলো দেখানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং হাস্যকর। সেখানে বলা হয়েছে, সেনাক্যাম্প স্থাপন হলে বিহারে ভিক্ষুদের চলাচলে নিরাপত্তাহীনতা এবং ভয়ভীতি তৈরি হবে।তাদের উক্ত দাবি নিতান্তই বাস্তবতা বিবর্জিত। কেননা সন্ত্রাসী অধ্যুষিত ও দূর্গম এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপন হলে নিরাপত্তা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যাবে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নির্বিঘ্নে এবং নির্ভয়ে বিহারে যাতায়াত করতে পারবে। অনতিবিলম্বে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দেশের স্বার্থে বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপন করে ইউপিডিএফ সহ সকল উগ্রপন্থী সন্ত্রাসীদের চিরতরে নির্মূল করার দাবি জানাচ্ছে “সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ”।

এ সময় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তফা আল ইহযায বলেন, “১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন ও রাজস্ব সংগ্রহের দোহাই দিয়ে ৩টি সার্কেল সৃষ্টি করে। ১৮৯২ সালে এই আইনের আংশিক সংশোধন করে ফরেষ্ট সার্কেল নামে নতুন ১টি সার্কেলসহ মোট ৪টি সার্কেল সৃষ্টি করে। তৎকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে রিজার্ভ ফরেষ্ট সার্কেল সৃষ্টি করা হয়েছিলো। রির্জাভ ফরেষ্ট সার্কেল ব্রিটিশ সরকারের বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। শুধু তাই নয়, ১৯০০ সালের শাসনবিধিতে অপরাধ দমন, শান্তি রক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ, ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় ব্রিটিশ শাসকের এখতিয়ারে ছিলো। একজন ডেপুটি কমিশনারের তত্বাবধানে শুধুমাত্র ৩টি সার্কেলের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়ে ছিলো সার্কেল চিফ কে। রাজস্ব আদায়ের জন্য নিয়োগকৃত ব্যক্তি কখনোই জমির মালিক কিংবা হস্তান্তরের পূর্ণ এখতিয়ার পেতে পারে না। এটি ১৮৮৪ সালের বিধিতেও কোনোভাবে স্বীকৃত বলে প্রমাণিত হয়না। ১৮৮৪ সালে বৃটিশ কতৃক প্রদত্ত ক্ষমতাকে অবৈধভাবে কাজে লাগিয়ে সার্কেল চিফগণ পার্বত্য ভূমি থেকে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে হাজার হাজার একর জমি উপজাতিদের নামে বন্দোবস্ত করে নেয়। আমরা ১৮৮৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বন্দোবস্তোকৃত সকল জমির বন্দোবস্ত সমূহ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

‎দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, ১৯২৯ সালে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামকে সম্পূর্ণ শাসন বর্হিভূত অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। এতে উপজাতিরা তাদের জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব রক্ষা ও পরিচয়ের সংকট পড়েছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ উপজাতিদের স্বীকৃতি প্রদান করে ।ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের আত্মপরিচয়।তারপরও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ভারতের প্ররোচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে “সেনা হঠাও, বাঙালি হঠাও” শ্লোগান তোলা হচ্ছে। ৬ টি সশস্ত্র সংগঠন মিলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও দেশের সুনাম নষ্ট করছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো শ্লোগান শুনতে চাইনা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহে সীমান্ত সড়ক তৈরির মাধ্যমে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে ড্রোনের সাহায্যে ২৪ ঘন্টা নজরদারি অব্যাহত রেখে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হোক। দেশের অখন্ডতা রক্ষা ও রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র উগ্রপন্থী নিধনের জন্য অনতিবিলম্বে জেলা সমূহের প্রতিটি মৌজায় সর্বনিম্ন
একটি করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালের মতোই পার্বত্য অঞ্চলের সুরক্ষায় সেনাবাহিনীর স্পেশালাইজ একটি “মাউন্টেইন ডিভিশন” গঠন করতে হবে।

‎তিনি আরও বলেন, ‎পার্বত্য চট্টগ্রামে দু’ধরণের ভূমি মালিকানার চর্চা করে আসছে উপজাতিরা। ক) প্রথাগত মালিকানা, খ) প্রচলিত আইন স্বীকৃত মালিকানা। বর্তমান আধুনিক যুগে প্রথাগত মালিকানা কোনোরূপ ভাবেই স্বীকৃত নয়, যা ১৯০০ শাসন বিধিতেও কোনো ভাবে স্বীকৃত বলে প্রমাণিত হয়না। ‎১৮৭০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক চর্তুথাংশ এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিলো । সেই বনাঞ্চল এখন দখলে নিয়েছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠীরা।রাষ্ট্রীয় খাস জমি এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়েছে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ অক্টোবর খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বারমাছড়ি ইউনিয়নে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন করতে গেলে সন্ত্রাসীরা বাঁধা প্রদান করে ।রাস্তায় গাছ কেটে সেনাবাহিনীর চলাচলের গতিরোধ করে। উগ্রপন্থী সশস্ত্র সংগঠনের নারী নেত্রীদের এনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। সেনাক্যাম্প নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ভূমিতে রাতের আঁধারে বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে ধর্মের দোহাই দিয়ে বড় ধরনের ইসুতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।  এতে স্পষ্ট হয়ে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে নারীদের বানিয়েছে তাদের ঢাল। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।

আগামী ৭ দিনের মধ্যে বারমাছড়ি এলাকায় সন্ত্রাস দমন করে শুকনাছড়ি গ্রামে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরু করার আহবান জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয় খাস জমি ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে “উচ্ছেদ অভিযান” পরিচালনা করে রাষ্ট্রীয় সকল জমি উদ্ধার করার জোর দাবি জানাচ্ছি । অন্যথায় দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল টি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS