শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ সুশীলা কার্কির ইসরাইলের হামলায় গাজায় আরও ৫০ জন নিহত সন্ধ্যা ৭টার মাঝে জাকসু নির্বাচনের ফল প্রকাশের আশা সিইসির নির্বাচন আয়োজনের অভিজ্ঞতা না থাকায় ফল প্রকাশে সময় বেশি লাগছে: জাবি প্রক্টর ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত কমেছে ১ শতাংশ গ্রেপ্তার হলেন সাবেক ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম আগামীকাল রবিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের ভোগান্তি লাঘবের চিত্র নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরার দাবী বৃহত্তর ডেমরা থানা আরজেএফ’র চায়ের আড্ডা অনুষ্ঠিত আরজেএফ’র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পেলেন রেজাউল ইসলাম

ওরস্যালাইনের উদ্ভাবক বাংলাদেশের বন্ধু ড. রিচার্ড ক্যাশ মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৪

জনস্বাস্থ্য গবেষক ও খাবার স্যালাইনের অন্যতম উদ্ভাবক ড. রিচার্ড অ্যালান ক্যাশ মারা গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য সরকার তাকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা দিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ব্র্যাকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. ক্যাশের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে ব্র্যাক পরিবারের পক্ষ থেকে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের শিক্ষক ড. রিচার্ড ক্যাশ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

ড. রিচার্ড ক্যাশ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে জনমত তৈরি, অর্থ সংগ্রহ ও স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও ড. রিচার্ড ক্যাশ বাংলাদেশকে তার দ্বিতীয় বাড়ি (সেকেন্ড হোম) বলে মনে করতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং সুদীর্ঘ সময়ের সহযাত্রী।

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিস্তৃত গবেষণা ও প্রভূত অর্জনের পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। ড. রিচার্ড ক্যাশ ১৯৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে চিকিৎসক হিসেবে ঢাকার কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে (বর্তমান আইসিডিডিআর,বি) যোগ দেন। এখানেই তিনি অন্য গবেষকদের সঙ্গে মিলে ডায়রিয়াজনিত রোগ সারানোর ক্ষেত্রে খাওয়ার স্যালাইনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করেন।

১৯৬৮ সালে তারা কুমিল্লার মতলব হাসপাতালে এই চিকিৎসার প্রয়োগ নিয়ে বিস্তৃতভাবে কাজ করেন। আশির দশকে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার এই চিকিৎসা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্র্যাকের নেতৃত্বে সারাদেশে ‘ওটেপ’ (ওরাল থেরাপি এক্সটেনশন প্রোগ্রাম) কর্মসূচি শুরু হয়। এই কর্মসূচির আওতায় ব্র্যাক বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক কোটি ২৫ লাখ মাকে হাতেকলমে খাবার স্যালাইন তৈরির শিক্ষা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে আসে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ড. রিচার্ড ক্যাশের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, জনস্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য রিচার্ড ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। বিশেষত যেখানে সুযোগ-সুবিধা সীমিত, সেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে একাগ্রচিত্তে, অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। তার দেখানো পথ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবীদের অনুপ্রাণিত করবে; আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে, খুব সহজ এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধানও সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যখাতে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। তার মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন মেন্টর ও একজন বন্ধুকে হারিয়েছি, যার পরামর্শ, প্রজ্ঞা ও তীক্ষ্ণ রসবোধ আমি খুব মিস করব।

ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ তার শোকবার্তায় বলেন, ‘রিচার্ডের মৃত্যুর সংবাদে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। সারা বিশ্বের লাখো শিশুর জীবন বাঁচাতে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন, সে কথা যুগ যুগ ধরে মানুষ স্মরণ করবে। এই অসামান্য অবদানের পেছনের মানুষটি ছিলেন দরিদ্রদের সেবায় গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ব্র্যাক ও বাংলাদেশের মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। প্রায় পাঁচ দশক ধরে তিনি ছিলেন আমার বাবা স্যার ফজলে হাসান আবেদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু এবং আমাদের পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ সদস্য। আমাদের জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গী ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে আমরা শুধু জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের একজন মহীরুহকে হারাইনি, আমাদের পরিবার এবং বৃহত্তর ব্র্যাক পরিবার একজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছে।

ড. রিচার্ড ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, দিল্লির পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়াসহ সারাবিশ্বে জনস্বাস্থ্যের বেশকিছু স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালে ব্র্যাক ইউএসএ অফিস প্রতিষ্ঠায় তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল এবং বিগত প্রায় দুই দশক ধরে তিনি ছিলেন ব্র্যাক ইউএসএ বোর্ডের সদস্য।

জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদানের জন্য ড. রিচার্ড ক্যাশ পেয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যার মধ্যে রয়েছে ২০০৬ সালের ‘প্রিন্স মাহিদল পুরস্কার’, যেটি বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটি শীর্ষস্থানীয় স্বীকৃতি। ২০১১ সালে পেয়েছেন ‘ফ্রাইজ প্রাইজ ফর ইম্প্রুভিং হেলথ’। হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একজন শিক্ষক হিসেবে ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারে তিনি জনস্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS