মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন

বীরগঞ্জে ছাত্র পেটানোর অভিযোগে শিক্ষক সাময়িক বরখান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ৮ জুন, ২০২২
  • ৪৯ Time View

নাজমুল ইসলাম (মিলন), দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে মিথ্যা অভিযোগে ছাত্রদের পিটিয়ে আহত করার অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক চঞ্চল রায়কে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

এরআগে নির্যাতনের শিকার ছাত্ররা পরীক্ষা বর্জন করে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে বীরগঞ্জ-গড়েয়া সড়কের পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জড়িত শিক্ষককে স্কুল থেকে বহিস্কারের দাবীতে অবরোধ করেন।

গত ৬ জুন সোমাবার পরীক্ষা শেষে চেয়ারে চুইংগাম লাগানোর অপরাধে ক্লাস রুমের দরজা বন্ধ করে শিক্ষক চঞ্চল রায় ২০/২২ জন ছাত্রকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। ঘটনার পর পররেই স্কুলে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নের বিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৬ জুন সোমবার ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা চলাকালে সহকারী শিক্ষক চঞ্চল রায়ের চেয়ারে কোন এক ছাত্র চুইংগাম লাগিয়ে দেয়। এই ঘটনায় শিক্ষক চঞ্চল রায় পরীক্ষা শেষে রুমের দরজা লাগিয়ে নবম ও ষষ্ঠ শ্রেনীর ২০/২২ জন ছাত্রকে আটকে রেখে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ওই সময় সংবাদ পেয়ে অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষক চঞ্চল রায় বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে অভিভাবক ও ছাত্ররা বিদ্যালয়ে অবস্থান নিলে পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ সিদ্দিকী মানিক ও বিদ্যালয়ের সভাপতি ডাঃ পরেশ চন্দ্র রায়, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

৭ জুন মঙ্গলবার ওই ঘটনা জড়িত শিক্ষক চঞ্চল রায়কে স্কুল থেকে বহিস্কারের দাবীতে পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্ররা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন শুরু করেন। তারা সকাল ১১ টায় বীরগঞ্জ-গড়েয়া সড়কের পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন।

এই খবর পেয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার কন্দর্প নারায়ন রায় সেখানে উপস্থিত হয়ে ছাত্র অভিভাবকদের শান্ত করে স্কুলে নিয়ে যান। তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ছাত্র ও অভিভাবকদের অভিযোগ শুনে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।

এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষক চঞ্চল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সকলের সিদ্ধান্ত মতে রেজুলেশনের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষক চঞ্চল রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে কেন তাকে স্তায়ী ভাবে বরখান্ত করা হবেনা তা জানতে চেয়ে শোকজ করা হয়েছে।

নবম শ্রেণীর ছাত্র সোহেল রানা, রাব্বি ইসলাম, মিত্র ধর রায় জানায়, আমরা পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। কে, কখন স্যারের চেয়ারে চুইংগাম লাগিয়েছে আমরা জানিনা। আমরা দেখিনি তাই স্যার জিজ্ঞাসা করলেও কারো নাম বলতে পারিনি।স্যারকে আমরা নির্দোষ একথা বলার পরও স্যার আমাদের ইচ্ছেমত মেরেছেন।আমরা এরকম শিক্ষক চাইনা। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব ইসলামের পিতা ইনসান আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে কোন দোষ করলে তিনি বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানাতে পারতেন।

প্রয়োজনে আমাদের ডাকতেন, আমরা সন্তানের অপরাধের বিচার করতাম। কিন্তু তিনি সামান্য ঘটনায় কোন একজনের অপরাধে ক্লাশের দরজা বন্ধ করে গণহারে আমাদের ছেলেদের গরুপেটা করবেন এটাতো হতে পারেনা। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

জরুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েলুর রহমান জুয়েল, বিদ্যালয়ের সভাপতি ডাঃ পরেশ চন্দ্র রায়, প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা খাঁজা নাজিম উদ্দীন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বকুল সাহা, প্রফেসার সাইফুল ইসলাম, ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

জানতে চাইলে বীরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার কন্দর্প নারায়ন রায় বলেন, প্রাথমিক ভাবে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক চঞ্চল রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন তাকে স্থায়ী ভাবে বরখান্ত করা হবেনা তা জানতে চেয়ে শোকজ করা হয়েছে।

শিক্ষক চঞ্চল রায় উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকার চন্দ্র কান্ত রায়ের ছেলে। বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বৈঠক চলা কালে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS