শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
প্রস্তাবিত পরিশ্রমী মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর নিবন্ধন পূর্ব প্রাক-প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গার উদ্যোক্তা ও গণমাধ্যমকর্মী মোঃ আব্দুল্লাহ হকের ২৫তম জন্মদিন উদযাপন  এসো বন্ধুত্বের টানে : নীলমনিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এসএসসি ১৯৯৭ ব্যাচের উদ্যোগে স্মরণিকা ‘বন্ধন চিরন্তন’-এর মোড়ক উন্মোচন গুলশান থানা এলাকা হতে ৬৫৯ বোতল বিদেশী মদসহ ০১ জন মাদক ব্যবসায়ী কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি-এর বার্ষিক ঝুঁকি বিষয়ক সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, টেকসই গণতন্ত্রও উন্নয়নের জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ; গোল টেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা জমকালো আয়োজনে চুয়াডাঙ্গায় বৈশাখী টেলিভিশনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি’র সদস্যদের মাঝে শিক্ষা অনুদানের চেক বিতরণ করলেন জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহে মাদকবিরোধী কাবাডি টুর্নামেন্ট ২০২৫ অনুষ্ঠিত

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, টেকসই গণতন্ত্রও উন্নয়নের জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ; গোল টেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৩২ Time View

আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্স এবং ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটির যৌথ উদ্যোগে ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক  গোলটেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও ‍সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ওপর দেশের টেকসই গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নের ভবিষ্যৎ গভীরভাবে নির্ভরশীল। এ জন্য আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশ-জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের জন্যও আগামী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।

গোল টেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্সের চেয়ার পার্সন প্রফেসর ড. মো. শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধউপস্থাপন করেন  নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান এবং প্যানেল আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডাকসু নির্বাচন-২০২৫ এর চিফ রিটার্নিং অফিসার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, চাকসু’র সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ আবদুল মোতালেব সরকার, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মোঃ শহিদুল ইসলাম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. গোলাম রহমান ভূঁঞা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক কৌশলী মারদিয়া মমতাজ, রিসডা-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ হেমায়েত হোসেন, আপ বাংলাদেশের প্রধান সংগঠন  নাঈম আহমাদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথি ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০০১ সালের পর দেশে আর কোন ভালো নির্বাচন হয়নি। বাংলাদেশে ভারতের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ফখরুদ্দিন সরকারের মাধ্যমেই এই সম্প্রসারণ সুদৃঢ়  করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৬ বছরে রাজনৈতিকভাবে দলীয় প্রশাসন তৈরী হয়েছে। এই দলীয় প্রশাসন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এই সরকার গত দেড় বছরে দশ হাজার পুলিশ নিয়োগ দিতো পারতো। স্বল্প ট্রেনিং দিয়ে এই পুলিশ বাহিনী দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি পদক্ষেপ নিতে পারতো। মাহমুদুর রহমান বলেন, বিগত সরকারের অনুগতরাও আগামীর নির্বাচনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। শহীদ ওসমান হাদীর  দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হত্যাকারীরা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। তাই আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। আধিপত্যবাদী শক্তি টার্গেট করে কিলিং মিশনে নেমেছে। তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রটি সব সময় বাংলাদেশে অস্থিরতা চায়। ভারতের কপট মনোভাবের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিয়ে ভারত মাথা ঘামায় । কিন্তু ভারতে প্রতিমাসে একজন করে মুসলমানকে হত্যা করা হয়। খৃষ্টান জনগোষ্ঠীকে তাদের বড় দিনের উৎসবের আগেও অত্যাচার করা হয়েছ। কিন্তু বাংলাদেশের কোন মিডিয়া ভারতের মানবাধিকার লংঘনের এসব ঘটনা তুলে ধরে না। বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া ভারতের পক্ষে বয়ান তৈরী করে ও তাদের স্বার্থে কাজ করে। তিনি দেশপ্রেমিক শক্তিকে ভারতসহ সকল আধিপত্যবাদী শক্তির আগ্রাসন রুখে দেয়ার আহবান জানান।

বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, এই সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা একটি বড় সমস্যা। তারা এই অবস্থায় কতটা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবে সেটি নিয়ে সংশয় আছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় সংকীর্ণ মনোভাবের বাইর আসতে পারছে না। নাগরিক সমাজকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতে বাধ্য করতে হবে যে, তারা (রাজনৈতিক দল) নির্বাচনে ভোট ডাকাতি-কারচুপি করবে না। এই ওয়াদা রাজনৈতিক দল গুলোর কাছ থেকে নাগরিক সমাজকে আদায় করে নিতে হবে। তিনি মনে করেন, বিদেশী শক্তির ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর নির্ভরশীল হওয়া উচিত হবে না। কেননা, হাসিনার মতো দিল্লীরবা অন্য কোন দেশের ‘ব্লাংক চেক’ আগামীতে কোন দলই পাবে না। সেজন্য রাজনৈতিক দল গুলোকে দেশের পক্ষে কাজ করতে হবে।নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমকে আরো সক্রিয় হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীর নির্বাচনকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে মাঠে দৃশ্যমান থাকতে হবে। ওসমানহাদী হত্যার পর নির্বাচনকে এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে দেখি নাই। তিনি বলেন যে শহীদ ওসমান হাদী তাঁর জীবন উৎসর্গ করে দিয়ে আমাদের আধিপত্যবাদ বিরোধী লাড়াইয়ে ইস্পাত কঠিন ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। তাই আমাদের থামলে চলবে না। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানর জন্য আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। আধিপত্যবাদের বিপক্ষে জনমত তৈরি করতে হবে। আগামীর নির্বাচনের ফলাফল যদি অংশগ্রহণকারী দলসমূহ মেনে না নেন, তাহলে তা আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না। তাই নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা প্রমান করতে হবে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রকে সংহত করতে মিডিয়া বা গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা আছে। তেমনিস্বচ্ছ ও সু্ষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকাও অপরিসীম। এজন্য ‘এক্সিট পোল’ প্রচারে তাদের সাবধান থাকতে হবে। নিরপেক্ষ থাকতে হবে।তিনি মনে করেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো নিস্ক্রিয়। বুলেট প্রুফ গাড়ি দিয়ে রাজনৈতিক নেতাকে চলতে হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন,আমাদের সামরিক বাহিনী কি আমাদের সহযোগিতা করছে? এ বারের নির্বাচনে তারা কি সাহায্য করবে? ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মাঠে থাকার পরও আইন—শৃঙ্খলার উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তারা ঢিমেতালে কাজ করছে। এআই এর অপব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেয়ার অপচেষ্টা থাকতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে উদাসীন মনে হয়েছে। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশে ফেরার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংশয় কিছুটা কেটে গেছে। তবে সরকারে যে ভূমিকা দেখা যাচ্ছে তাতে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশী শক্তি বিশেষ করে একটি বিদেশী শক্তি সমস্যার সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের এজেন্ডা আছে। নিজেদের বিশেষ করে রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। আগামীর নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক প্রফেসর ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ, যেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন রাষ্ট্র পুনর্গঠনের পূর্বশর্ত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আগামীর জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এসব ইস্যু আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। তবে, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কমিশনের প্রকৃত স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে জন আস্থা কতটা রয়েছে। শুধু নিরপেক্ষ হওয়াই নয়, কমিশনকে দৃশ্যত ও নিরপেক্ষ দেখাতে হবে—অন্যথায় নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। একই সঙ্গে, একটি প্রতিযোগিতা মূলক ও অংশগ্র হণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে বড় রাজনৈতিক দল গুলো, নতুন প্রজন্ম ও বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীভয় মুক্ত ভাবে অংশ নিতে পারে। আওয়ামীলীগ ও তাদের ঘনিষ্ঠ শক্তির অংশ গ্রহণ বা বর্জন নিয়ে দার্শনিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক ও এই প্রক্রিয়াকে জটিল করেছে। কারণ এটি শহীদদের ত্যাগের সম্মান বনাম রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন তুলছে। এই অন্তর্ভুক্তিকে গুরুত্ব দিলে, ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে শত শত শহীদ, আহত ও পঙ্গুদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা হিসেবে দেখা দেবে। মূলতঃ বিগত শাসক শ্রেণি একটি সন্ত্রাসী দল ছিল। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড তার প্রমাণ করে। বিভিন্ন ব্যাংক দখলসহ গুম-খুন এবং অন্যান্য দখল দারিত্ব তার প্রমাণ বহন করে। তাই, এসব ক্রিমিনাল কর্মকান্ডের জন্য আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের বিচার করা জরুরী। আরেকটি বড় ইস্যু হলো নির্বাচনের অনিশ্চয়তা যদি ভোটের ফল আগেই জানা যায়, তবে ভোটারের আস্থা ও অংশ গ্রহণ কমে যাবে। ভোটের প্রভাব ফলাফলে পড়তে পারে—এই বিশ্বাস সৃষ্টি করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাই ভোটারদেরকে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেই আস্থা তৈরী করতে হবে। এজন্য নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা জরুরী। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। কমিশনকে তাঁর সাংবিধানিক ও আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। কোন দলের প্রতি কোন রকম বিরুপ মনোভাব পোষণ করা যাবে না। এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল অংশী জনকেও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে প্রশাসনের উচিত হবে, কারো প্রতি বিমাতা সূলভ আচরণ না করা।

ড. করিম বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের মুক্ত ভূমিকা, এবং সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে পড়বে। প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, সমান সুযোগ, গণমাধ্যমে সুষম প্রচার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভার সাম্য রক্ষা ও নির্বাচনী ময়দানে সমতা আনার জন্য আবশ্যক। তরুণ প্রজন্মের চাহিদা—ন্যায় বিচার নিশ্চিত, কর্মসংস্থান ও সংস্কার পূরণ না হলে তাদের আস্থা হারানো ও সামাজিক অসন্তোষ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের সাথে ও সরাসরি যুক্ত। কেননা, বিনিয়োগ, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও আর্থিক খাতের স্থায়িত্ব এর উপর নির্ভর করছে। পরিশেষে তিনি বলেন, মুখোমুখি সংঘাত ও বর্জনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একতা, স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মান দণ্ডে ফেরার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জনাব অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সব ভোটকেন্দ্রকে সিসিটিভির আওতায় আনা জরুরি। পাশাপাশি কালো টাকার প্রভাব ও নির্বাচনী সন্ত্রাস ঠেকাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অর্থের অপব্যবহার রোধে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।তিনি আরও বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ, দক্ষ ও পেশাদার ভূমিকা একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই সনদ ও ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দলীয়করণ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও সরকার পরিচালনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে—যেখানে নতুন কোনো ধরনের ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে না।তিনি আরও উল্লেখ করেন, শহীদওসমানহাদীসহজুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের হত্যাকারীদের বেশিরভাগই এখনো গ্রেপ্তার হয়নি; তাই তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের জন্য একটি ভয়হীন পরিবেশ তৈরী করতে হবে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের কোন ফর্মেই নির্বাচন অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া যাবে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করাহ য়েছে। নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্যরা দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ে। আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। রাজনীতিবিদরা নীতিবান হলেই শুধু চলবে না, তাদের নীতি ও ভালো হতে হবে। দলীয় কোন্দল দলীয়ভাবে সমাধান করতে হবে। অন্যের বাড়ি-ঘর ভাংচুর-ক্ষতি করা যাবে না। আওয়ামীলীগ চলে গেছে কিন্তু চাঁদাবাজি-হানাহানি চলে যায়নি। কিছু দলের ছত্র ছায়ায় এখনো এসব চলছে। কিছু পত্রিকার অতীত ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছুকিছু সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীর কারণে দেশের এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সাবেক সিনিয়র সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম প্রশাসনর অতীত কর্মকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নচেৎ প্রশাসনের প্রাসঙিগকতা থাকবে না। দলবাজ মনোভাব দূর করতে হবে। তা না হলে, অপকর্মের জন্য অতীতের মতো আগামীতেও কর্মকর্তাদের জেলে থাকতে হবে অথবা পালিয়ে থাকতে হবে। এরুপ হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জসিম উদ্দীন বলেন, ‘কালো টাকা ও মাসল পাওয়ার’ফেয়ার নির্বাচনকরার ক্ষেত্রে বড় বাধা। ভোট কেন্দ্রেসিসি ক্যামেরার স্থাপনের মাধ্যমে সহিংসতাসহ ভোট ডাকাতি ও কারচুপি রোধ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

খেলাফত মজলিশের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম বলেন, দেশে এখনো নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তিনি খেলাফত মজলিশের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে সারাদেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং সমতার ভিত্তিতে সকল রাজনৈতিক দল ও মতের অংশীজনদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরির জন্য আহ্বান জানান।এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে বৈষম্যহীন ও ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আগামীর বাংলাদেশ হবে ফ্যাসিবাদমুক্ত এবং আধিপত্যবাদমুক্ত—এমনই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, শহীদ শরীফ ওসমান হাদী ছিলেন আঠারো কোটি মানুষের কন্ঠস্বর। হাদীর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি করে বক্তারা বলেন, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেই হবে। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এজন্য যাতে আবার হাদীর মতো কারো ভাগ্য বরণ করতে না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। কিছু ব্যক্তিকে নিরাপত্তার জন্যগানম্যান দেয়া কোন সমাধান নয়।

বক্তারা আরো বলেন, টেকসইগণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য অবাধ-স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। আজ জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেওয়া জরুরি—যাতে কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না ঘটে। এই বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই অভিন্ন উপলব্ধি রয়েছে। বক্তারা আশা বাদ প্রকাশ করে বলেন, জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে এবং জনগণের এই ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সকল অংশীজনকে তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

বক্তারা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, সন্ত্রাস বন্ধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, প্রতিটি ভোটকেন্দ্র বডিক্যাম ও সিসিটিভির আওতায় আনা, কালো টাকার প্রভাব রোধসহ প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা নির্বাচন কমিশনের শুধু নিরপেক্ষ অবস্থানই নয়, বরং তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও সময়োপযোগী উদ্যোগের প্রতিও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বক্তারা আরোবলেন, দীর্ঘ সময়ের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন দুর্বল হয়েছে, নির্বাচন কমিশনও তার ব্যতিক্রম নয়। অথচ জবাবদিহিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কার্যকর, গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা অপরিহার্য। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কেবল নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়—এতে সরকারি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, পর্যবেক্ষক সংগঠন ও নাগরিক সমাজসহ সকল অংশীজনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন যে, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংগঠনসমূহ, বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবা সংস্থা, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে গঠিত ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্স এবং ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS