
বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় চলতি বছরের জুন মাসে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই অংক এযাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড লেনদেন। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগে একক মাসে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল চলতি বছরের এপ্রিলে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুহূর্তে দেশের যেকোনো স্থানে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক এক পরিবর্তন এনেছে মোবাইল ব্যাংকিং। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস থেকে সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন ভাতা ও অনুদানও যাচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে। এখন মানুষ সময় বাঁচাতে নগদ লেনদেনের চেয়ে ক্যাশ লেস লেনদেনে বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। মুহূর্তে সর্বত্র লেনদেনে গতিশীল করছে দেশের অর্থনীতি।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাড়তি কোনো টাকা ছাড়াই ঘরে বসে খোলা যায় হিসাব। শহর কিংবা গ্রামে নিমেষেই পাঠানো যায় অর্থ। কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, ঋণ গ্রহণসহ যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নানা পরিষেবা। বিদেশ থেকে আসছে রেমিট্যান্স। হাতের মুঠোয় মিলছে সেবা। ফলে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) ওপর মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি বাড়ছে নির্ভরশীলতা। ফলে গ্রাহকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।
১৩ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক ২০ কোটি- মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সঙ্গে দিনদিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টির মতো ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। ২০২৩ সালের জুন মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার জন। গ্রাহক বেশি হওয়ার কারণ অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছে। লেনদেনের সুবিধার্থে একাধিক সিমের হিসাব খুলছে।
নিবন্ধিত এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৯৬ ও নারী ৮ কোটি ৬৮ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৬ জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭২২টি, যা মে মাসে ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩৪০টি।
এখন গ্রাহক ঘরে বসেই ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহক-সম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজেই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছেন। ফলে গ্রাহক হওয়ার যে ঝামেলা মুক্তভাবে হিসাব খুলতে পারছেন।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান।
বিকাশ-নগদে নানান পরিষেবা- মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এখন গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিনে দিনে নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পাঠানো হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা আর উত্তোলন হয়েছে ৩৭ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এ সময় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩৩ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ৫ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
সম্পাদক: মোঃ শাহাব উদ্দিন, প্রকাশক: মোঃ শাহজাদা হোসাইন, নির্বাহী সম্পাদক : এম শহিদুল ইসলাম নয়ন
অফিস: ১৪/১৬ কাজলারপাড়, ভাঙ্গাপ্রেস, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২৩৬
@ Economicnews24 2025 | All Rights Reserved