বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন–২০২৫-এর প্রথম অধিবেশন আজ (২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার) রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল ৮টায় অর্থসহ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন ক্বারী শাইখ খোবাইবুল হক তানঈম আল-আজহারী। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে শাহাদাতবরণকারী কিশোর শহীদ মুনতাসির আলিফের গর্বিত পিতা সৈয়দ গাজিউর রহমান। উদ্বোধনকালে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী এবং ছাত্রশিবিরের গুমকৃত সদস্যদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই ডা. শফিকুর রহমান দেশ ও দ্বীনের জন্য শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদের মহান আল্লাহর দরবারে মর্যাদাবান শহীদ হিসেবে কবুলিয়াত কামনা করেন। তিনি বলেন, “আজকের বাংলাদেশ পেতে আমাদেরকে ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা আব্দুল মালেক থেকে শুরু করে সর্বশেষ বিপ্লবী শরিফ উসমান হাদি—অনেকেই এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “গত ৫৪ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের হাতে কলমের বদলে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষাঙ্গনগুলো মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছিল। ছাত্রদের জীবন, ভবিষ্যৎ ও মেয়েদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। সেই অন্ধকার অধ্যায় বিদায় নিতে শুরু করেছে, তবে কালো ছায়া এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন আর কখনো অস্ত্র, মাদক কিংবা নারীদের নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়—এই পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব এখন ছাত্রশিবিরের ওপর। মা-বোনেরা যেন শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে লেখাপড়া করতে পারে এবং প্রতিটি ছাত্র যেন তার মেধা বিকাশে মনোযোগী হতে পারে—ছাত্রশিবিরকে সে পরিবেশ গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এখন আর শুধু একটি সাধারণ ছাত্রসংগঠন নয়; ২০২৪-পরবর্তী বাস্তবতায় এটি কার্যত বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের অভিভাবকের দায়িত্ব পেয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চরিত্র গঠন, নৈতিক শিক্ষা, আধুনিক জ্ঞান ও গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত করতে ছাত্রশিবিরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রসমাজের কাঁধে শহীদদের রক্তের ঋণ এবং ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশার বোঝা রয়েছে। এই বোঝা বহনের শক্তি আল্লাহ তোমাদের দান করুন। ইনশাআল্লাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদিন বাংলাদেশেও ইনসাফের বিজয় হবে।”
সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বের পর প্রথম অধিবেশনে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও বরেণ্য অতিথিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) চেয়ারম্যান আনওয়ারুল ইসলাম চান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিবৃন্দ।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মুফতি কাজী ইবরাহীম, বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার প্রাক্তন অধ্যক্ষ মাওলানা যায়নুল আবেদীন, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা (যাত্রাবাড়ী)-এর অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, আধিপত্যবাদবিরোধী বিপ্লবী জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরিফ উসমান হাদির বড় ভাই ওমর ফারুক প্রমুখ।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে ছাত্র ও যুব আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কা জামায়াতে ইসলামীর প্রকল্প ব্যবস্থাপনা অফিসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মালিক জালালুদ্দিন এবং ইন্দোনেশিয়ার কামি (KAMMI)-এর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান রিদওয়ান আল-মুগোমিয়েরুভ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সর্বোচ্চ প্ল্যাটফর্ম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনস (IIFSO)-এর মহাসচিব ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ, যুক্তরাজ্যের মুসলিম যুব নেটওয়ার্কের সভাপতি রিদওয়ান রাশিদ।
আন্তর্জাতিক যুব সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ইসলামিক ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফোরামের যুব শাখার স্কাউট ইউনিটের প্রধান মুহাম্মদ আই. এম. আবু চাকরা এবং মালয়েশিয়ার ইসলামিক পার্টির যুব শাখার যোগাযোগ প্রধান খাইরুল নাদির হেলমি।
বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর)-এর সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের সভাপতি আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন, ভাষানী ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি)-এর সভাপতি মেহেদি হাসান মাহবুব, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আবু দারদা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের সভাপতি বি. এম. আমির জিহাদী। তাঁরাও নেতা ও শিক্ষার্থী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের সভাপতি মোহাম্মদ প্রিন্স আল আমিন, ছাত্র মিশনের সভাপতি মো. রেজাউল ইসলাম সিয়াম এবং ছাত্র ফোরামের আহ্বায়ক রিয়াদ হোসেন।
দুপুর ১টায় কেন্দ্রীয় সভাপতির সমাপনী বক্তব্য ও দোয়ার মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হয়।
সম্পাদক: মোঃ শাহাব উদ্দিন, প্রকাশক: মোঃ শাহজাদা হোসাইন, নির্বাহী সম্পাদক : এম শহিদুল ইসলাম নয়ন
অফিস: ১৪/১৬ কাজলারপাড়, ভাঙ্গাপ্রেস, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২৩৬
@ Economicnews24 2025 | All Rights Reserved