
লিটন পাঠান, নাছিরনগর থেকে ফিরে: ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাছিরনগরের স্কুল ছাত্রী হাবিবা আক্তার (৮) ছিল খুবই শান্ত স্বভাবের। সে হরিণবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিখোঁজ হওয়ার মাত্র একদিন আগেই বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল হাবিবা।খেলেছিল স্কুলের মাঠে। এখন তার নিথর দেহ পড়ে আছে অন্ধকার কবরে। ধর্ষণের পর নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় শিশু হাবিবাকে। এই ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন প্রতিবেশী যুবক দুলাল মিয়া (২৮) পুলিশ জানায়, ২ ডিসেম্বর রাতে হাবিবা নিখোঁজ হয়।পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন দুলালও। শিশুটির বাবার সঙ্গে খোঁজাখুঁজি এমনকি মাইকিংয়েও অংশ নেন দুলাল। তদন্তে বেরিয়ে আসে, সেই দুলালই হাবিবাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতনের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনাটি নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের শংকরাদহ গ্রামের গত ৩ ডিসেম্বর এ ঘটনা ঘটে।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদ আহাম্মদ জানান, বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলি আদালত) বিচারক আশরাফুল আলমের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি দুলাল মিয়া। গ্রেপ্তার দুলাল মিয়া উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের শংকরাদহ গ্রামের নাছির মিয়ার ছেলে এবং ওই এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। নিহত হাবিবা একই গ্রামের কৃষক মনুস মিয়ার ছোট মেয়ে। তার মা সৌদি প্রবাসী।
জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর রাতে ঘর ডেকে নেয় হাবিবাকে। সেই থেকে নিখোঁজ হয় হাবিবা। অনেক খোঁজাখুঁজি ও মাইকিং করার পর ৩ ডিসেম্বর বুধবার সকালে শংকরাদহ গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মনুস মিয়া অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে নাসিরনগর থানায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মাহবুব আলম সরকার।
আসামির জবানবন্দির বরাতে নাসিরনগর থানার ওসি মাকছুদ আহাম্মদ জানান, লাশ উদ্ধারের সময় স্থানীয়দের অনেকের মতো দুলালও পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করার চেষ্টা করেন। তবে দুলালের কিছু তথ্য ছিলো সন্দেহজনক ও বিভ্রান্তিকর। তার অসংলগ্ন আচরণে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ যখন জানতে পারেন শিশুটির বাবার সঙ্গে সেও খোঁজাখুঁজি করেছিলো তখন সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। দুলালের সন্দেজনক আচরণের বিষয়টি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মো আ. রউফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সরাইল সার্কেল মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারে সঙ্গে আলোচনা হয়। এর পর ঘটনার রাতেই শিশুটির বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্তে নামে নাসিরনগর থানা পুলিশ ও র্যাব।
ওসি মোঃ মাকছুদ জানান, ঘটনাস্থলের আলামত এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঘটনার রাতে দুলাল মিয়াই হাবিবাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর পাশের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করেন। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে তার মুখ ও গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় দুলাল। মেয়ের হত্যাকারী হিসেবে প্রতিবেশীর নাম শুনে বাকরুদ্ধ বাবা মনুস মিয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এত নিষ্ঠুর মানুষ কেমনে হয়? এই দুলালই আমার সাথে হাবিবাকে খুঁজতে বের হয়েছিল। কে জানত, সে-ই আমার মেয়ের, খুনি হরিণবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার বলেন, হাবিবা খুব শান্ত ও ভদ্র ছিল। মাত্র একদিন আগেই হাবিবা পরীক্ষা দিল। এমন ফুটফুটে একটা শিশুর এই নির্মম পরিণতি আমরা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
সম্পাদক: মোঃ শাহাব উদ্দিন, প্রকাশক: মোঃ শাহজাদা হোসাইন, নির্বাহী সম্পাদক : এম শহিদুল ইসলাম নয়ন
অফিস: ১৪/১৬ কাজলারপাড়, ভাঙ্গাপ্রেস, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২৩৬
@ Economicnews24 2025 | All Rights Reserved