বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশে নীতিনির্ধারকদের নিকট দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অধিকতর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে খসড়া সংশোধনী প্রস্তুত করেছে।

এই প্রেক্ষিতে সোমবার (১৫ জুলাই ২০২৪) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ) এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম রাজধানীর বিএমএ ভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করে।

জনাব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন, প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এদেশে তামাক ব্যবহার জনিত রোগে প্রতিদিন প্রায় ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। তামাকের ভয়াবহতা থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন”। তিনি মন্ত্রীপরিষদে আইনের সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আহ্বান জানান এবং শীঘ্র তা সংসদে উত্থাপনের আবেদন রাখেন।

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসি-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করাতামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করাতামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানিউৎপাদনব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করাতামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।

জনাব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী আরও বলেন, “বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। তাই এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।”

জনাব ড. মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান, সভাপতি,  টাঙ্গাইল জেলা সমিতি এবং সাবেক সচিব বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, “আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো সিএসআর-এর নাম করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে; অন্যদিকে আধুনিকতার টোপ দেখিয়ে-সিগারেটের মতন নিত্যনতুন পণ্য তরুনদের হাতে তুলে দিয়ে বাজার সম্প্রসারণ করছে তারা। এই আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য আইনকে শক্তিশালী করার আর কোন বিকল্প নেই”।

“তামাকের পক্ষে কোন যুক্তি নেই। জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি এর ক্ষতির ভয়াবহতা বহুমূখী। তামাক থেকে যে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে তার থেকে তামাকজনিত রোগের পেছনে সরকারের বার্ষিক ব্য ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এখানেও ক্ষতির পরিমানই বেশি। এইসকল দিকগুলোকে নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষের সামনে বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে” বলে মন্তব্য করেন জনাব মাইনুল হাসান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম।

সেমিনারে শুভেচ্ছা ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন এএইচএম নোমান, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, ডরপ। তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, লীড পলিসি এডভাইজার, সিটিএফকে, সাবেক সচিব এবং চেয়ারম্যান, বিসিআইসি এবং জনাব আব্দুস সালাম মিয়া, প্রোগ্রামস ম্যানেজার, সিটিএফকে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এর সভাপতি জনাব রাশেদ রাব্বি এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডর্‌প এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান।

উল্লেখ্য, উক্ত অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের সদস্যগণ, গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ, ডরপ মাতৃ সংসদের সদস্যগণ এবং যুব ফোরামের সদস্যবৃন্দ খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী দ্রুত পাশের গুরুত্ব আরোপ করে ৬টি সংশোধনী প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান।

ডর্‌প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডরপ বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS