টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবশেষে শুরু হয়েছে চার দিনের যুদ্ধবিরতি।
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) থেকে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত এ যুদ্ধবিরতি।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে যুদ্ধবিরতি শুরুর সময় জানিয়েছিল কাতার।
দোহায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। ১৩ জন জিম্মি এদিন সন্ধ্যায় মুক্তি পাবেন। এই সময়ের মধ্যে জিম্মিদের মধ্যে যারা একই পরিবারের তাদের একত্রিত করা হবে।
এছাড়া চার দিনের মধ্যে ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রতিদিন নতুন করে আরও বেসামরিক জিম্মিকে যুক্ত করা হবে। তবে নিরাপত্তার কারণে গাজা থেকে বন্দীদের কোন পথে নিয়ে যাওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন,
আমাদের মূল লক্ষ্য জিম্মিদের নিরাপত্তা। আমাদের অপারেশন রুমের মাধ্যমে তারা যাতে নিরাপদে সেখানে পৌঁছান তা নিশ্চিত করার দিকে আমরা মনোযোগ দেব। জিম্মিদের গাজা থেকে মুক্তির বিষয়টিতে যুক্ত থাকবে রেডক্রস ও যুদ্ধের অন্য পক্ষগুলো।
ইসরাইলি নন, এমন বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আল-আনসারি বলেন,
জিম্মিদের অগ্রাধিকার দেয়ার মানদণ্ডটি সম্পূর্ণরূপে মানবিক। আমাদের মনোযোগ ছিল, যত দ্রুত সম্ভব নারী ও শিশুদের প্রাণহানির পথ থেকে সরিয়ে আনা যায়।
সংঘাত থামবে?
হাজারো মানুষের প্রাণহানির পর চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হলো ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগেই হুঙ্কার দিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত।
যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরাইলের হামলা আরও তীব্র হবে এবং আরও অন্তত দুই মাস এই যুদ্ধ চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদন মতে, বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ইসরাইলি নৌবাহিনীর বিশেষ অপারেশন ইউনিটের যোদ্ধাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন গ্যালান্ত। এ সময় তিনি বলেন,
সামনের দিনগুলোতে তোমরা যা দেখতে পাবে তা হলো- প্রথমে জিম্মিদের মুক্তি। এই যুদ্ধবিরতি সংক্ষিপ্ত হবে।
যুদ্ধবিরতির সময় সেনাদের নতুন করে সংগঠিত হওয়া এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়ে গ্যালান্ত বলেন, ‘আবারও হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত হও।’
যুদ্ধ আরও দুই মাস চলবে জানিয়ে তিনি বলেন,
যুদ্ধ ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। কারণ আমাদের বিজয় সম্পূর্ণ করতে হবে এবং অন্য জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আগে ঠিক একই ধরনের হুঙ্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
হামাস কী বলছে
ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করলেও গাজার জনগণকে রক্ষায় সশস্ত্র প্রস্তুতি থাকবে বলে আগেই সতর্ক করে দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
হামাসের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
আমরা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছি, সেই সঙ্গে নিশ্চিত করছি যে বিরতি শেষ হওয়ার পর আমাদের আঙুল থাকবে বন্দুকের ট্রিগারে। আমাদের অকুতোভয় যোদ্ধারা অবশ্যই দখলদার শক্তিকে পরাজিত করে গাজার জনগণকে রক্ষা করবে।
সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ইসরাইল ও হামাস দুই পক্ষই নিজেদের ‘বৃহত্তর লক্ষ্য অপরিবর্তিত থাকবে’ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। এই হামলায় গাজা কার্যত মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার অর্ধেকই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply